শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া : একজন বৈচিত্র্যময় সংস্কারক:
ইসলামের ইতিহাসে প্রতিটি শতাব্দীতে মুসলিম বিশ্বে এমন কিছু ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটেছে যারা প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়েছেন এবং ইসলামী দাওয়াত ও সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর এই বৈশিষ্ট্য ইসলাম ভিন্ন অন্য জাতির মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না।
এরই ধারাবাহিতায় হিজরি অষ্টম শতকে মুসলিম ইতিহাসে সংস্কার, বিপ্লব ও পুনর্জাগরণের নেতৃত্ব দিয়েছেন শায়খুল ইসলাম ইমাম তাকিউদ্দীন আহমদ ইবনু তাইমিয়া রাহি.। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহি. এমন এক নাযুক ও দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে তাজদিদের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন যখন হালাকু খানের নেতৃত্বে তাতারি হামলায় মুসলিম বিশ্বের গৌরবময় রাজধানী বাগদাদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ইমাম ইবনু তায়মিয়া রাহি. তার মেধা,যোগ্যতা,সুস্থ বোধশক্তি (আকলে সালিম) আর দ্বীনের স্বভাবজাত প্রেরণা পরিবার থেকেই অর্জন করেছেন। তার পিতামহ আবুল বারাকাত মাজদুদ্দীন ইবন তাইমিয়া ছিলেন হাম্বলি মাজহাবের ইমাম।
হাফিজ যাহাবি ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ গ্রন্থে এবং আল্লামা শাওকানি ‘নায়লুল আওতার’ গ্রন্থে তাকে ‘মুজতাহিদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, আল্লামা শাওকানির ‘নায়লুল আওতার’ ইবনু তায়মিয়ার পিতামহের রচিত ‘মুনতাকিউল আখবার’-এর ভাষ্যগ্রন্থ যা আট খণ্ডে প্রকাশিত ও সমাদৃত।
শায়খুল ইসলামের পিতা আব্দুল হালিম ইবনু তায়মিয়াও (র.) ছিলেন হাম্বলি মাজহাবের উঁচু মাপের একজন ফকিহ। তিনি দামেস্কের প্রসিদ্ধ ‘জামি উমাইয়্যা’ মসজিদে দরস প্রদান করতেন।
ইমাম ইবনু তাইমিয়া (র.) মেধা, অনন্য স্মৃতিশক্তি আর কঠিন অধ্যবসায় দ্বারা তার পিতামহ আর পিতাকেও অতিক্রম করতে সক্ষম হোন। তিনি ইমাম হুমায়দির কিতাব ‘আলজামি বায়নাস সাহিহাঈন’ কণ্ঠস্থ করেন। তাফসির শাস্ত্র, ফিকহ, উসুলে ফিকহ তথা জ্ঞানের সব শাখায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্রে ইমাম সীবাওয়ায়হ-এর ‘আল-কিতাব’ অধ্যায়নকালে এর মধ্যে ৮০ স্থানে ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করেন। অথচ সে যুগে আল কিতাব ছিল সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আরবি ব্যাকরণ গ্রন্থ।
মোটকথা জ্ঞানের সব শাখায় পাণ্ডিত্য অর্জন করে মাত্র ২২ বছর বয়সে ‘দারুল হাদিস আসসুকরিয়া’য় দরস প্রদান শুরু করেন। তার প্রথম দরসে দামেস্কের কাযিউল কুযাত (প্রধান বিচারপতি), শাফিঈ ও হাম্বলী মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেমগণ এবং শহরের গণ্যমান্য ও সুধী মহল উপস্থিত ছিলেন।
তারা সবাই তার জ্ঞানের গভীরতা, উপস্থিত বুদ্ধি, সাহসিকতা ও ভাষার আলংকারিকতার স্বীকৃতি প্রদান করেন। ইবন কাসির রাহি. তার ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ গ্রন্থের ১৩তম খণ্ডে উক্ত দরসের বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। দূর-দূরান্তে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। জামি উমাইয়্যা মসজিদে ও তাফসীরের দরস শুরু করেন এবং দিন দিন লোক সমাগম বাড়তে থাকে। ইসলাম ও দ্বীনের জন্য ইমাম ইবনু তাইমিয়ার রাহি. মহান খেদমত, সংস্কার আন্দোলের বিস্তৃত আলোচনা স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। এখানে শুধু তার উল্লেখযোগ্য কিছু সংস্কার ও অবদান তুলে ধরা হল-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদ
দামেশকে উসসাফ নামক জনৈক খ্রিস্টান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কটূক্তি করে ও গালি দেয়। প্রতিবাদে ইমাম ইবনু তাইমিয়া তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘আসসারিমুল মাসলুল আলা শাতিমির রাসূল’ প্রণয়ন করেন।
গ্রীক-দর্শন,তর্কশাস্ত্র ও ফালসাফার বিরোধিতা
তিনি গ্রীক-দর্শন, ফালসাফা ও তর্কশাস্ত্রের বিরুদ্ধে ঝাণ্ডা উত্তোলন করেন। যেহেতু তার যুগে গ্রীক দর্শন,মানতিক ও ফালসাফার জোয়ার ছিল এবং একেই জ্ঞানের মানদণ্ড বিবেচনা করা হতো, তাই তিনি ‘কিতাবুর রাদ্দি আলাল মানতিকিয়্যীন’ রচনা করেন এবং এর উপর শাস্ত্রীয় আলোচনা করেন। তিনি ‘তাফসিরু সূরাতিল ইখলাস’-এ দর্শনের প্রতিপাদ্য, সমস্যা,ত্রুটি এবং অসংগতিগুলো সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোকপাত করেছেন।
কালাম শাস্ত্রের সমালোচনা
আল্লাহতায়ালার যাত-সিফাতের আলোচনায় কুরআন সুন্নাহ ভিন্ন স্বতন্ত্র পরিভাষা ব্যবহারের কঠিন সমালোচনা করেন। মূলত গ্রীক দর্শনের মোকাবেলা ও ধর্মকে সাহায্য করতে কালাম শাস্ত্রের উদ্ভাবন হয়েছিল আর য়ার অনেকে মনে করেন এর প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু পরবর্তী যুগের মুতাকাল্লিমগণ জ্ঞান-গবেষণা ও চিন্তার স্থবিরতার কারণে দর্শনের মুকাবেলায় পরাস্থ হতে থাকেন। তারা আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা,গুণাবলী ও নবুওয়ত-রিসালত তথা অতিপ্রাকৃত বিজ্ঞানের আলোচনায় নবী সা. সাহাবীগণ এবং পূর্ববর্তীদের অনুসৃত নীতি পরিত্যাগ করে এমন কিছু পরিভাষা ব্যবহার শুরু করেন যা পারসিক, রোমক ও ইহুদিদের লালিত-পালিত দর্শনের সমান্তরাল। তিনি এর বিরুদ্ধে তার ঐতিহাসিক ফতোয়া প্রদান করেন যা ‘আল আকিদাতুল হামাবিয়াতুল কুবরা’ ও (আক্বীদা-ই-ওয়াসিতিয়া) নামে প্রসিদ্ধ।
ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ প্রত্যাখ্যান
সুফিদের শায়খে আকবর ইবনু আরাবি-এর ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ’ মতবাদ অস্বীকার করেন। ইবন আরাবি “ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” (সৃষ্টির অস্তিত্বই স্রষ্টার অস্তিত্ব) মতবাদের প্রবক্তা ছিলো। ইবনু আরাবি ‘ফুসুসুল হিকাম’ ও ‘ফুতুহাতে মাক্কিয়্যা’ গ্রন্থে এই মতবাদের আলোচনা করেছে। তার কিছু ছাত্র ও অনুসারীর মাধ্যমে এই মতবাদের প্রয়োগ শুরু করে। তাদের মধ্যে ইবন সাবঈন, সদরুদ্দীন কৌনবি ও তিলিমসানি উল্লেখ্যযোগ্য। তারা প্রচার করতে থাকে,যেহেতু স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য নেই তাহলে ইবাদত করারও প্রয়োজন নেই। তিলিমসানির মতো ভ্রান্ত সুফী ও তাদের মতবাদের বিরুদ্ধে তিনি ‘আর রাদ্দুল আকওয়াম আলা মা ফি ফুসুসিল হিকাম’,’আল ফুরকান বাইনাল হক্ব ওয়াল বাতিল’ নামক গ্রন্থ দু’টি রচনা করেন।
উল্লেখ্য, ইবনু তাইমিয়া ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ’ মতবাদের সমান্তরাল ‘ওয়াহদাতুশ শুহুদ’-এর প্রবক্তা ছিলেন। পরবর্তী যুগে শায়খ ইয়াহইয়া মুনায়রি বিহারি রাহি. এবং শায়খ আহমদ সরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফ ছানী রাহি.ও ইবন তাইমিয়ার অনুগামী হোন। মুজাদ্দিদ রাহি. তার মাকতুবাতে ‘ওয়াহদাতুশ শুহুদ’ মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
খ্রিস্টধর্ম প্রত্যাখ্যা
ইবনু তাইমিয়ার যুগে সাইপ্রাসের জনৈক খ্রিস্টান পাদ্রী একটি বিতর্কিত গ্রন্থ লেখেন, যেখানে তিনি দাবি করেন, ‘খ্রিস্টধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম, মুহাম্মাদ আরবের নবী বিশ্বের নবী নন’। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহি.-এর উত্তরে, ‘আল জাওয়াবুস সাহিহ লি মান বাদ্দালা দ্বীনাল মাসিহ’ নামক অনবদ্য গ্রন্থটি রচনা করেন। ১৩৯৫ পৃষ্ঠার বইটিতে ইমাম শুধু যুক্তি খণ্ডনই করেননি, খ্রিস্টধর্মের ভিত্তিমূলেও আঘাত করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, নেল পলই প্রথম খ্রিস্টধর্ম বিকৃতি সাধন করে আর সম্রাট কনস্টানটাইন দ্বিতীয় বড় ধরনের পরিবর্তন করেন এবং খ্রিস্টধর্মে রোমকদের প্রতিমা পূজার অনুপ্রবেশ ঘটায়।
শিয়া রাফেজি ও জাহমিয়া মতবাদ খণ্ডন
ইমামের সমসাময়িক শিয়া আলিম ইবনুল মুতাহহির ‘মিনহাজুল কারামত ফি মারিফাতিল ইমামাত’ গ্রন্থ রচনা করে।
যেখানে সে আলী রাদি. ও আহলে বায়াতের ইমামত এবং ইসমতের (নিষ্পাপ হওয়া) দাবি করে। তিন খলিফার খেলাফত অবৈধ দাবি করে এবং সব সাহাবাগণের চরিত্র হনন করে। ইমাম ইবনু তায়মিয়া রাহি. তার বিরুদ্ধে কলম ধরেন এবং ‘মিনহাজুস সুন্নাতিন নবুবিয়্যাহ ফি নকদি কালামিশ শিআয়্যা’ রচনা করেন। জাহমিয়াদের আক্বিদা খণ্ডনে রচনা করেন ‘কিতাবু তালবিসিল জাহমিয়া’।
মাশহাদ-মাজার পূজার বিরোধিতা
ফাতেমি সালতানাতের (উবায়দী হুকুমত) সময় হতে মিসর ও মুসলিম বিশ্বে মসজিদের তুলনায় মাজার ও মাশহাদের গুরুত্ব বেড়ে যায়। অধিকাংশ মাজার ও মাশহাদের উপর গড়ে ওঠে আকাশচুম্বী প্রাসাদ, রৌপ্যমণ্ডিত গম্বুজ। হজ্জ কাফেলার মতো বিরাট বিরাট কাফেলা দূর-দুরান্ত থেকে এ সব মাশহাদের জিয়ারত করতে আসা শুরু করে। ফলে মসজিদসমূহের গুরুত্ব কমে যায় এবং তার জায়গা মাশহাদসমূহ দখল করে নেয়। এ বিষয়ে ইবন তাইমিয়া ঐতিহাসিক মন্তব্য করেন, ‘তাদের মাজারগুলো জৌলুশ ও জমজমাট থাকে আর মসজিদগুলো থাকে জনশূন্য,বিরাণ’। তিনি এ সব কাজের বিরোধিতা করেন এবং ‘আর রাদ্দু আলাল বাকরি’, ‘আর রাদ্দু আলাল আখনায়ী’,’আল ওয়াসেতাতু বায়নাল হক্ক ওয়াল খলকি’ নামক গ্রন্থগুলো রচনা করেন।।
তাতারিদের বিরুদ্ধে লড়াই
তাতারি সেনাপতি কাযানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দামেস্ক আক্রমণে নিরুৎসাহিত করেন। তখন কাযান দামেস্ক আক্রমণের ইচ্ছা পরিত্যাগ করেন। কয়েক বছর পর তাতারি সেনাপতি আবারও দামেস্ক আক্রমণের জন্য রওয়ানা হয়। তখন ইবনু তাইমিয়া নিজে মিসর সফর করেন এবং সুলতানকে তাতারিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। অবশেষে সুলতান তাতারিদের মুকাবেলা করতে আব্বাসি খলিফা আবুর রবি’ সুলায়মানসহ নিজেই ময়দানে আগমন করেন। ইবনু তাইমিয়া ও ময়দানে অবস্থান করে সৈন্যদের মনোবল বৃদ্ধি করেন। যুদ্ধে মুসলিমগণ বিজয় লাভ করে আর তাতারিরা পর্যুদস্ত হয়।
ইবন তাইমিয়া রাহি. ও তাকলিদ
আমাদের দেশের অনেকে প্রচার করে থাকেন যে, ইবন তাইমিয়া রাহি. ‘তাকলিদ’ করতেন না। অথচ তিনি হাম্বলি ফিকহের মূলনীতি অনুসরণ করে ফতোয়া প্রদান করতেন। তার অনেক ফতোয়া হানাফি,মালেকি ও শাফি মাজহাব অনুযায়ীও হতো। কিছু মাসআলার ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তিনি একক মত প্রদান করতেন। যার উদাহরণ অনেক ইমাম,মুজতাহিদদের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। আর এমন একক মাসআলাগুলো নুমান ইবন মাহমুদ আলুসি স্বীয় জালাউল আইনাইন আনিল আহমদাইন গ্রন্থে একত্র করেছেন। এ সব বিষয়ের আলোকে ‘ইবনু তায়মিয়া’ গ্রন্থের লেখক মুহাম্মাদ আবু যুহরা তাকে হাম্বলি মাজহাবের ‘মুজতাহিদে মুনতাসিব’(অনুগামী মুজতাহিদ) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহি. মনে করতেন সাধারণ শ্রেণি এবং অমুজতাহিদ আলেমদের জন্য ইজতিহাদ আবশ্যিক প্রয়োজন। সুতরাং যে সব ইমাম ও মুজতাহিদের তাকলিদ করা হবে তাদের ভূমিকা হবে শুধুই মাধ্যম ও শিক্ষকের, পথ ও পথ-প্রদর্শকের । তবে কেউ যদি ইমামকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করে তাহলে তার জন্য তাকলিদের বৈধতা নেই। পরবর্তী যুগে শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি রাহি. ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ গ্রন্থে এ জাতীয় তাকলিদকে অবৈধ বলেছেন। ফিকাহ্ শাস্ত্রে চার মাজহাবের ইমামগণের অবদান, তাদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিতে প্রণয়ন করেন ‘দাফউল মানাম আনিল আইম্মাতিল আলাম’।
যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহি. তার জ্ঞান,গরিমা ও ব্যক্তিত্বের দ্বারা সমাজ ও যুগের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তাই অসংখ্য ভক্ত,অনুরক্ত,ছাত্র ও শিষ্যদের এক বিশাল জামাত রেখে গেছেন। যারা তার ইলম,দাওয়াত আর চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহক ছিলেন। তাদের মধ্যে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহি. যিনি ইলম,প্রজ্ঞা,গুণ ও মর্যাদায় নিজেই ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে যা দুল মায়াদ’ ‘কিতাবুর রুহ’ “মাদারিজুস সালিকিন” সমাদৃত ও বহুল পঠিত। তার ছাত্রদের মধ্যে ‘তাবাকাতুল হানাবিলাহ’ ও “সিয়ারু আলামিন নুবালা” গ্রন্থদ্বয়ের লেখক হাফিজ ইবন রজব হাম্বলি অন্যতম। হাফিজ ইবনু কাসির যিনি তাফসিরে ইবন কাসির এবং ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের জন্য অমর হয়ে আছেন। ‘সুয়ারু ‘আলামিন নুবালা’ এবং ‘মিজানুল ই’তিদাল’ গ্রন্থের লেখক হাফিজ শামসুদ্দীন যাহাবি এবং ইবনুল হাদি তার অন্যতম শাগরেদ ছিলেন।
রচনাবলী
তার অসংখ্য রচনাবলী রয়েছে। অনেকে এ সংখ্যা ৫০০ উল্লেখ করেছেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সিরাজুল হক তার ‘ইবনু তাইমিয়া এন্ড হিজ প্রজেক্ট অব রিফর্ম’ শীর্ষক গবেষণা অভিসন্দর্ভে শায়খুল ইসলামের ২৫৬টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। ইবন তাইমিয়ার সূরা নূর আর সুরা ইখলাসের তাফসির পাঠে যে কোনো মুসলিমের হৃদয় বিগলিত হয়ে ঐশি প্রেমের ফল্গুধারা বয়ে যাবে। চার খণ্ডে প্রকাশিত তার ফতোয়া সংকলন ‘ফতোয়ায়ে ইবন তায়মিয়া’ এবং সৌদি সরকার কর্তৃক বিশাল কলেবরে প্রকাশিত ত্রিশ খণ্ডের ‘ফতোয়ায়ে ইবনু তায়মিয়া’ ফিকাহ শাস্ত্রের একটি পূর্ণঙ্গ বিশ্বকোষ। ইতিহাসের দর্শন এবং মনস্তত্ত্ববিদদের পর্যবেক্ষণ হল, অনন্য সাধারণ আর ক্ষণজন্মা প্রতিভার ক্ষেত্রে দু’টি পক্ষের সৃষ্টি হয়, এক পক্ষ তাদের ভক্তে পরিণত হয় এবং বাড়াবাড়ি করে থাকে এবং অপর পক্ষ তার বিরোধিতা ও সমালোচনায় আদাজল খেয়ে নামে। শাইখুল ইসলামের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে দাওয়াতের জন্য তাকে জীবনে অনেক প্রতিকূলতা এবং বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়ছে, এমনকি তিনি বিবাহও করতে পারেননি জীবনে।
আমরা চাইলে আমাদের জীবনের জন্য এই উত্তাল সমুদ্র হতে অনেক মণিকাঞ্চন সংগ্রহ করতে পারব। ইন শা আল্লাহ।