মানুষের জীবনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক কাজের প্রভাব

মানুষের জীবনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক কাজের প্রভাব:

মানুষের জীবনের সমগ্র কার্যাবলী দু’টি অংশে বিভক্ত হবে। একটি ইতিবাচক বা সৎ কাজ এবং অন্যটি নেতিবাচক বা অসৎ কাজ। ইতিবাচক অংশের অন্তর্ভুক্ত হবে সত্যকে জানা ও মেনে নেয়া এবং সত্যের অনুসরণ করে সত্যের জন্য কাজ করা। আখিরাতে একমাত্র এটিই হবে ওজনদার, ভারী ও মূল্যবান। অন্যদিকে সত্য থেকে গাফিল হয়ে অথবা সত্য থেকে বিচ্যূত হয়ে মানুষ নিজের নফস-প্রবৃত্তি বা অন্য মানুষের ও শয়তানের অনুসরণ করে অসত্য পথে যা কিছুই করে, তা সবই নেতিবাচক অংশে স্থান লাভ করবে। আর এ নেতিবাচক অংশটি কেবল যে মূল্যহীনই হবে তা-ই নয়; বরং এটি মানুষের ইতিবাচক অংশের মর্যাদাও কমিয়ে দিবে।

কাজেই মানুষের জীবনের সমুদয় কার্যাবলীর ভাল অংশ যদি তার মন্দ অংশের ওপর বিজয় লাভ করে এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে অনেক কিছু দেওয়ার পরে-ও তার হিসেবে কিছু না কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবেই আখিরাতে তার সাফল্য লাভ করা সম্ভব। আর যে ব্যক্তির জীবনের মন্দ কাজ সমস্ত ভাল কাজকে মূল্যহীন করে দিবে তার অবস্থা হবে সেই দেউলিয়া ব্যবসায়ীর মত যার সমুদয় পুঁজি ক্ষতিপূরণ ও দাবী পূরণ করতে করতেই শেষ হয়ে যায় এবং এরপরও কিছু কিছু দাবী তার জিম্মায় অনাদায়ী থেকে যায়।

মানুষ যে পথে নিজের সমস্ত সময়, শ্রম, যোগ্যতা ও জীবন পুঁজি ব্যয় করে, তার একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়ে যদি সে জানতে পারে যে, এসব তাকে সোজা ধ্বংসের দিকে টেনে এনেছে এবং এ পথে সে যা কিছু খাটিয়েছে তাতে লাভের পরিবর্তে উল্টো তাকে দণ্ড ভোগ করতে হবে, তাহলে এর চাইতে বড় দেউলিয়াপনা তার জন্য আর কী হতে পারে!

এক্ষেত্রে এসে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হলো— সংশয়বাদীর জীবনটা সবচেয়ে খারাপ দেউলিয়াপনা হয়ে থাকে।

একজন কাফির যখন নিজের রবের মুখাপেক্ষী না হয়ে এবং পরকাল থেকে বেপরোয়া ও আল্লাহর আইনের আনুগত্য মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে বস্তুগত স্বার্থের পেছনে দৌঁড়াতে থাকে তখন সে নিজের পরকাল হারালেও দুনিয়ার স্বার্থ কিছু না কিছু হাসিল করেই নেয়।

আর একজন মুমিন যখন পূর্ণধৈর্য, অবিচলতা, দৃঢ় সংকল্প ও স্থৈর্য সহকারে আল্লাহর দ্বীনের আনুগত্য করে তখন যদিও পার্থিব সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার পদ-চুম্বন করেই থাকে, তবুও যদি দুনিয়া একেবারেই তার নাগালের বাইরে চলে যেতেই থাকে, আখিরাতে তার সাফল্য সুনিশ্চিত হয়।

কিন্তু সংশয়বাদী নিজের দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করতে পারে না এবং আখিরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভাবনা থাকে না। তার মন ও মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠে আল্লাহ ও আখিরাতের অস্তিত্বের যে ধারণা রয়েছে এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক তার মধ্যে নৈতিক সীমারেখা কিছু না কিছু মেনে চলার যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে, দুনিয়ার দিকে দৌঁড়াতে থাকলে এগুলো তার হাত টেনে ধরে।

নিছক দুনিয়াবী ও বৈষয়িক স্বার্থ অন্বেষার জন্য যে ধরনের দৃঢ়তা ও একনিষ্ঠতার প্রয়োজন তা একজন কাফিরের মতো তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। আখিরাতের কথা চিন্তা করলে দুনিয়ার লাভ ও স্বার্থের লোভ, ক্ষতির ভয় এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বিধি-নিষেধের শৃংখলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে মানসিক অস্বীকৃতি সেদিকে যেতে দেয় না বরং বৈষয়িক স্বার্থ পূজা তার বিশ্বাস ও কর্মকে এমনভাবে বিকৃত করে দেয় যে, আখিরাতে তার শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি লাভের সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে সে দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারায়।

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *