অশ্লীলতা প্রতিরোধে রবের ঘোষণা:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জাননা।”
পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আয়াতের প্রত্যক্ষ অর্থ হচ্ছে, যারা অশ্লীলতার অপবাদ তৈরী করে ও তা প্রচার করে মুসলিম সমাজে চরিত্রহীনতার প্রসার ঘটাবার এবং উম্মাহর চরিত্র হননের চেষ্টা করছে তারা শাস্তি লাভের যোগ্য। কিন্তু আয়াতের শব্দাবলী অশ্লীলতা ছড়াবার যাবতীয় অবস্থার অর্থবোধক।
কার্যত ব্যভিচারের আড্ডা-আসর বসানোর ওপরও এগুলো প্রযুক্ত হয়। আবার চরিত্রহীনতাকে উৎসাহিত করা এবং সেজন্য আবেগ-অনুভূতিকে উদ্দীপিত ও উত্তেজিতকারী কিস্সা-কাহিনি, কবিতা, গান, ছবি ও খেলাধূলার ওপরও প্রযুক্ত হয়। তাছাড়া এমন ধরনের ক্লাব, হোটেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় এসে যায় যেখানে নারী-পুরুষের মিলিত নৃত্য ও মিলিত আমোদ ফূর্তির ব্যবস্থা করা হয়। কুরআন পরিষ্কার বলছে, এরা সবাই অপরাধী। কেবল আখেরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও এদের শাস্তি পাওয়া উচিত। কাজেই অশ্লীলতার এসব উপায়-উপকরণের পথ রোধ করা একটি ইসলামি রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন এখানে যে সমস্ত কাজকে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ গণ্য করছে এবং যেগুলো সম্পাদনকারীকে শাস্তিলাভের যোগ্য বলে ফায়সালা দিচ্ছে ইসলামি রাষ্ট্রের দণ্ডবিধি আইনে সে সমস্ত কাজ শাস্তিযোগ্য ও পুলিশের হস্তক্ষেপ লাভের উপযোগী হতে হবে।
আয়াত উল্লেখিত فَاحِشَة শব্দের অর্থ হলো— নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা। তবে কুরআনে ব্যভিচারকেও فًاحِشَة (অশ্লীলতা) বলে গণ্য করা হয়েছে। আর এখানে ব্যভিচারের একটি মিথ্যা খবর প্রচার করাকেও আল্লাহ অশ্লীলতা বলে অভিহিত করেছেন এবং একে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির কারণ হিসাবে গণ্য করেছেন। যাতে অশ্লীলতা সম্পর্কে ইসলামের ভূমিকা এবং আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার অনুমান করা যেতে পারে যে, কেবলমাত্র অশ্লীলতার একটি মিথ্যা খবর প্রচার করা আল্লাহর নিকট এত বড় অপরাধ, তাহলে যারা দিবারাত্রি মুসলিম সমাজে সংবাদপত্র, রেডিও, টি-ভি, ভিডিও, সিডি, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে যে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে ও ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে, তারা আল্লাহর নিকট কত বড় অপরাধী বলে গণ্য হবে এবং এই সমস্ত কর্মক্ষেত্রের কর্মচারিগণ কিভাবে অশ্লীলতা প্রসারের অপরাধ হতে অব্যাহতি পাবে? এমনি ভাবে যারা নিজেদের বাড়িতে টি-ভি রেখে নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে, তারাই-বা অশ্লীলতা প্রসারের অপরাধী কেন হবে না? ঠিক অনুরূপভাবে অশ্লীলতা ও ইসলাম-বিরোধী কথায় পরিপূর্ণ দৈনিক সংবাদপত্র (বা মাসিক পত্র-পত্রিকা) বাড়ির ভিতর প্রবেশ করাও অশ্লীলতা প্রসারের একটি কারণ। এটিও আল্লাহর নিকট অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। হায়! যদি মুসলিমরা নিজেদের কর্তব্য অনুভব করত এবং অশ্লীলতার বন্যাকে বাধা দেওয়ার সাধ্যমত চেষ্টা কর
আয়াতের শেষাংশ আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।” অর্থাৎ তোমরা জানো না এ ধরনের এক একটি কাজের প্রভাব সমাজে কোথায় কোথায় পৌঁছে যায়, কত লোক এগুলোতে প্রভাবিত হয় এবং সামষ্টিকভাবে এর কি পরিমাণ ক্ষতি সমাজ জীবনকে বরদাশত করতে হয়। এ বিষয়টি আল্লাহ তাআলাই খুব ভালোভাবে জানেন। কাজেই আল্লাহর ওপর নির্ভর করো ও অশ্লীলতা ও ব্যভিচারকে প্রতিহত করার চেষ্টা কর। এগুলো ছোট ছোট বিষয় নয় যে, এগুলোর প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে হবে। আসলে এগুলো অনেক বড় বিষয়। কাজেই যারা এসব কাজ করবে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। আর সেই শাস্তির ব্যবস্থা আল্লাহ তাআলা দুনিয়া এবং আখেরাতে করে রেখেছে।