নৈতিকতার মানদণ্ড ও একান্ত দাসত্ব:
একজন মুমিনের কাছে নৈতিকতার মানদণ্ড হলো— আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তার আইন-বিধানের অনুসরণ, তার নিষিদ্ধ পথ পরিহার। তার ঐকান্তিক বিশ্বাস, এ পথেই প্রকৃত সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব। মানবতার সত্যিকার কল্যাণ এ পথেই নিহিত। এই পথে তাদের অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়। অনেক ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ও অনেক ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। কিন্তু তাতে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে না, মন এ পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে চলতে রাজি হয় না। যত ক্ষতিই আসুক না কেন, সে পথেই তারা অগ্রসর হয় বীরদর্পে, নির্ভীক চিত্তে।
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং তার স্নেহাস্পদ ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর ঘটনা দুনিয়ায় কার অজানা? বৃদ্ধ বয়সে পুত্র সন্তানের কামনা করলেন আল্লাহর কাছে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলা তাকে তাই দান করলেন। এই কামনার ধনকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করার ইশারা দিলেন আল্লাহ তাআলা মহান পিতাকে। আল্লাহয় নিবেদিত প্রাণ পুত্র বললেন, “হে পিতা! আপনাকে যে কাজের আদেশ করা হয়েছে তা আপনি কার্যকর করুন, আল্লাহ চাইলে আমাকে আপনি ধৈর্যশীলই পাবেন।”
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর ইচ্ছা পুরণার্থে প্রাণাধিকপ্রিয় পুত্রকে কাত করে শোয়ায়ে দিলেন, তখনই প্রমাণিত হলো, পিতৃ হৃদয় আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে পুরোমাত্রায় প্রণত। তখন আল্লাহর পরীক্ষার কাজ পূর্ণ সমাপ্ত। তাই তিনি ঘোষণা করলেন, “হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্নের ইশারাকে সত্যে বাস্তবায়িত করেছ। আমি আমার নিবেদিতপ্রাণ লোকদের এমনি প্রতিদান দিয়ে থাকি।”
এ পর্যায়ে এসে আল্লাহ তাআলার শেষ কথা হলো, “সে (ইবরাহীম) নিঃসন্দেহে আমার মুমিন বান্দাদেরই অন্যতম।”
বস্তুত, এই দাসত্ব। একান্তভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদিত। এ ইমান কেবলমাত্র তারই প্রতি। আর “একান্তভাবে আল্লাহর দাসত্ব”—এর অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া অন্য সকলেই সবকিছুরই অধীনতা ও আনুগত্য পরিহার করে কেবলমাত্র এক আল্লাহর অধীনতা ও আনুগত্য স্বীকার করা। অতঃপর আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে বিনয় জানানো হবে না। সবকিছুর অধীনতা ও আনুগত্য থেকে হবে সম্পূর্ণ মুক্তি ও নিষ্কৃতি। বান্দা কেবল আল্লাহর আদেশ-নিষেধই মানবে। মানবে হৃদয়-মনের পরিপূর্ণ নিষ্ঠা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা সহকারে। সে ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা বা সংকোচ তাকে বিভ্রান্ত করবে না। এরই নাম হলো— “একান্তভাবে আল্লাহর দাসত্ব”।