পিঞ্জিরাবদ্ধ কয়েদীর মুক্তি-ই আমাদের আশা, প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার জমিনে তার হুকুমত কায়েম করতে চান, প্রতিষ্ঠিত করতে চান একচ্ছত্র কর্তৃত্ব, গোটা জগতের সামনে যিনি নিজকে মোড়ল প্রমাণ করতে চান না, এমন কি দুনিয়ার কোন রাষ্ট্র কিংবা পার্টিকে কোন পরাশক্তির লেজুড় বানাতে যিনি নাখোশ। মানবতাকে আত্মার গোলামী, কু-প্রবৃত্তির গোলামী, ধন-দৌলত ও পুঁজিবাদের গোলামী থেকে মুক্তি দিতে চান, প্রকৃত মানুষ তিনি না হলে হবেন কে?
জনৈক আরব বেদুইন, ঐশী বল যাকে নির্ভীক বানিয়েছিল, তিনি বলিষ্ঠ দৃপ্ত কণ্ঠে ইরানের সিপাহসালার রুস্তমকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
ان ابتعثنا لنخرج من نشاء من عبادة العباد الى عبادة الله ومن ضيق الدنيا الى وسعتها
“আল্লাহ তাআলা মানুষের গোলামী থেকে মানুষকে আল্লাহর গোলামী করার সবক দিতে তোমাদের কাছে আমাদের প্রেরণ করেছেন।”
যে রুস্তমের নাম শুনলে সৈন্যদের পিলে চমকে উঠত। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যত কন্ঠনালী, তার সামনে দাঁড়িয়ে এ ধরনের বিস্ময়কর উক্তি চাট্টিখানি কথা নয়।
ঐ বেদুইনের কথায় সেদিন সাসানী সাম্রাজ্যের ভিতে কাঁপন ধরেছিল। তিনি রুস্তমকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, সাম্রাজ্যের নামে তোমরা মানবতাকে গোলাম করে রেখেছ, “ইসলাম” ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে এসেছে সেই নিষ্ঠুর সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি। সাসানী রাজত্বের ছদ্মাবরণে রাজতন্ত্রের যে ন্যক্কারজনক অধ্যায়ের অভ্যুদয় ঘটিয়েছ তোমরা, “ইসলাম” এসেছে সেই বংশগত সংকীর্ণতাকে মিসমার করে তার ওপর হকের পতাকা উড্ডীন করতে। আমরা এসেছি তোমাদের পাশবিক আচার-আচরণের সৌধচূড়া ভেঙ্গে সেখানে আরব উদারতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে।
হে হতভাগ্য ইরানীরা! তোমরা পিঞ্জিরাবদ্ধ পাখির ন্যায় লৌহ খাঁচায় আটকে আছ। তোমরা হাসি ও ক্রীড়া-কৌতুকে নিমগ্ন। আল্লাহ তাআলার নেয়ামতকে ঢালাওভাবে ভোগ করছ। তোমরা অভ্যাসের দাস। বিলাসবহুল কৌতুকসামগ্রী আঞ্জমকারীদের দাস। চাকর-চাকরানীর দাস। বাবুর্চিদের দাস। পক্ষান্তরে আমরা শুধু আল্লাহ তাআলার দাস। তোমরা এমন অসংখ্য নিষ্প্রাণ পাথরকে বসিয়েছ আল্লাহর আসনে যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। আমরা এসেছি সেই দেবতার উপাসনা থেকে তোমাদের মুক্তি দিতে। তোমাদের চরিত্রহীনতার হিসেব কষবে কোন্ যন্ত্র? বস্তুর মায়া তোমাদের অন্তরে সুসংহত। ইসলাম ছাড়া তোমাদের মুক্তি নেই। যে জাতি গোলামী জিন্দেগীকে প্রাধান্য দেয়, তাদের দুর্গতি রুখতে হেজাজের কাফেলা ছুটে এসেছে ইরানের ভূমিতে। এর ছায়াতলে থেকে তোমরা মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, পাবে স্বস্তি।
এই আমাদের আশা, প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার।