ইসলামের বিকৃত উপস্থাপনে ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের অনুসারীদের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ:
যখন কেউ সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয় তখন সে চায়— সকলেই যেনো তার মত হয়ে যায়। যেমন— শয়তান সরল পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার পরে আল্লাহ তাআলাকে বলেছিল, ❝আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, সে কারণে অবশ্যই অবশ্যই আমি আপনার সরল পথে মানুষের জন্য বসে থাকব। তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে থেকে ও তাদের পিছন থেকে, তাদের ডানদিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।❞ (সুরাহ আল-আরাফ, আয়াত ১৬-১৭)
এজন্য ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের অনুসারীরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার পরে মুসলিমদেরকে সরল পথ থেকে সরানোর জন্য এবং তাদের দ্বীন বিকৃত করার নিমিত্তে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকে। যেমন :
- ১. দুর্বল প্রকৃতি ও দোদুল্যমান ইমানদার লোকদেরকে সম্পদ ও পদের প্রলোভন দেওয়া, অথবা নারীর টোপ দেওয়া, যেন তারা ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের বাণী ও শ্লোগান মানুষের কর্ণকুহরে প্রবেশ করাতে ও প্রচার করতে পারে। অবশ্য তার পূর্বেই তারা তাদের প্রতারণার শিকার লোকদেরকে বিভিন্ন মিডিয়ায়, যেগুলোতে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে, সেগুলোতে এমনভাবে তুলে ধরে যেন মানুষ তাদেরকে আলিম, চিন্তাবিদ ও প্রচুর জান্তা হিসেবে মনে করে এবং সাধারণ লোকদের নিকট তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। অতঃপর তাদের দ্বারা ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের প্রচারণা চালায়। এভাবে তারা অনেক মানুষকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়।
- ২. কতিপয় লোককে তারা পাশ্চাত্য দেশে ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের আশ্রমে লালন করে এবং তাদেরকে একাডেমিক বিভিন্ন নামী-দামী পদবি প্রদান করে, যেমন ‘ডক্টর’ অথবা ‘প্রফেসর’ ইত্যাদি। অতঃপর সেখান থেকে প্রর্ত্যাবর্তন করার পর দ্বীনকে বিকৃত ও ভিন্নভাবে উপস্থাপনের জন্য তাদেরকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এ থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে তাদের অস্তিত্ব কতটুকুন ক্ষতিকর; অথচ তারাই সুশীল নামে খ্যাত, স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটির কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব তাদের হাতেই ন্যাস্ত।
- ৩. এ মতবাদে বিশ্বাসী লোকদের অপর একটি কূটকৌশল হচ্ছে, দ্বীন বা ধর্মকে বিভক্ত করা। তার নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সমালোচনা ও লেখা-লেখি করা এবং মানুষদেরকে তাতে ব্যস্ত রাখা। এ লক্ষ্যে তারা দ্বীনদার ছাত্র, ধর্মীয় আলিম ও ইসলামের দিকে আহ্বানকারী দায়িদের সাথে অযথা তর্কে লিপ্ত হয়, যেন তারা মানুষদেরকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপদেশ-নসিহত প্রদানের পরিবর্তে তর্কে ব্যস্ত থাকে।
- ৪. দ্বীনি আলিম, ধর্মীয় ছাত্র ও আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী দায়িদেরকে রেডিও-টেলিভিশন ও বিভিন্ন মিডিয়ায় পশ্চাৎগামী, চারিত্রিকভাবে অধঃপতিত ও দ্বিতীয় শ্রেণির লোক হিসেবে উপস্থাপন করা। সেইসাথে এরা প্রচার করা যে, তারা পদ, সম্পদ ও নারী লোভী, যেন মানুষেরা তাদের কথায় বিশ্বাস না করে ও ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের প্রচারের ময়দান উন্মুক্ত হয়।
- ৫. বিরোধপূর্ণ মাসআলা ও আলিমদের ইখতিলাফ নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করা, যেন মানুষ জানে দ্বীন মতবিরোধের স্থান এবং দ্বীনি আলিমদের মাঝে কোনো ঐক্য নেই। এভাবে মানুষ বিশ্বাস করতে শিখবে যে, দ্বীনের কোনো বিষয় অকাট্য ও চূড়ান্ত নয়, অন্যথায় এতো বিরোধ সংগঠিত হত না। ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের অনুসারীরা এ দিকটার প্রতি খুব গুরুত্বারোপ করে। মুসলিম সমাজে তাদের বানোয়াট ধর্মের কুপ্রভাব ছড়ানোর লক্ষ্যে এ জাতীয় বিষয়কে তারা লাল কালি দিয়ে ❝হেডলাইন আকারে❞ পেশ করে। উদ্দেশ্য হলো, মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীন থেকে দূরে রাখা।
- ৬. পাশ্চাত্য দেশসমূহের আদলে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি ও অপরিচিত কালচারাল সেন্টার নির্মাণ করা। এসব প্রতিষ্ঠান মুসলিম দেশে নির্মিত হলেও পরিচালিত হয় প্রকৃতপক্ষে ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের অধীনে পরিচালিত রাষ্ট্রসমূহের তত্ত্বাবধানে। ইসলামের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক দুর্বল করার লক্ষ্যে তারা চেষ্টার ত্রুটি করে না। একই সাথে তাদের বাতিল ধর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর কাজও করে ব্যাপকভাবে, বিশেষ করে সামাজিক, দার্শনিক ও মনোবিদ্যা বিভাগে তাদের পদচারণা ও প্রচারণা খুব বেশী লক্ষ্য করা যায়।
- ৭. শারিআতের কতক বিধান, যার প্রয়োগ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ও সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে, তার উপর স্থানকাল-পাত্র ও বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে অন্ধভাবে জমে থাকা। এভাবে তারা শারিআতের ভুল ও বিকৃত দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে ধর্মনিরপেক্ষতা বা তার অধিকাংশ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে।
ধর্মনিরপেক্ষতা বা তার অধিকাংশ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে।
উদাহরণত শারিআতের একটি নীতি হলো, ‘মাসালিহে মুরসালাহ’ (জনস্বার্থ)। এ নীতিকে তারা প্রথমে উল্টোভাবে বুঝে, তারপর ভুল পথে প্রয়োগ করে। অতঃপর সেটারই দোহাই দিয়ে ইসলামের যে অংশ তারা পছন্দ করে না তা প্রত্যাখ্যান করে ও ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের বিধানগুলো বাস্তবায়ন করে। মুসলিম দেশে ধীরেধীরে ❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ শক্তিশালী হওয়া ও তার ভিত্তিসমূহ মজবুতির এটি একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
অনুরূপ শারিআতের আরেকটি নীতি হলো, ❝দুটি ক্ষতিকর বস্তু থেকে কম ক্ষতিকর বস্তু ও দুটি ফেতনা থেকে ছোট ফেতনাকে গ্রহণ কর।❞ আরেকটি নীতি হলো, ❝প্রয়োজন নিষিদ্ধ বস্তুকেও বৈধতা প্রদান করে।❞ আরেকটি নীতি হলো, ❝ফায়দা হাসিল করার চেয়ে ক্ষতি দূর করাই অধিক শ্রেয়।❞ অনুরূপ একটি নীতি হলো, ❝ইসলাম সর্বযুগে উপযোগী।❞ আরেকটি নীতি হলো, ❝অবস্থার ভিন্নতার ভিত্তিতে ফতোয়া ভিন্ন হয়।❞ এ জাতীয় নীতিকে তারা গলদভাবে প্রয়োগ করে অন্যান্য ধর্ম ও মতবাদের সাথে ইসলামকে গুলিয়ে ফেলে ও মুসলিমদের ধোঁকা দেয়।
অনুরূপ এসব নীতিকে তারা কাফিরদের দেশে প্রচলিত অর্থনৈতিক বিধান, রাজনৈতিক ভাবনা-দর্শনকে মুসলিম দেশে আমদানি করার হাতিয়ার হিসেবে গলদভাবে প্রয়োগ করে, যেন অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত অবস্থা না জেনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমার দৃষ্টিতে তাদের এ কৌশল সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর। কারণ এতে মানুষ সন্দেহ ও ধোঁকায় পতিত হয়। তারা ভাবে এসব তো শারিআতের নীতি যা ইসলামের নিকট স্বীকৃত। তাদের এ কৌশলের মুখোশ উন্মোচনের জন্য স্বতন্ত্র কিতাব প্রয়োজন, তবেই দ্বীন থেকে সন্দেহ ও অস্পষ্টতা দূর করা সম্ভব হবে এবং মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝানো যাবে।
এখানে আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, এ জাতীয় নীতির উপর তাদের ভরসা করার অর্থ এ নয় যে, তারা ইসলামের এসব নীতিতে বিশ্বাসী। আবার এ অর্থও নয় যে, যে-উৎস থেকে এসব বিধান এসেছে, সেই ইসলামের ব্যাপ্তি, ব্যাপকতা ও পরিপূর্ণতার উপর তাদের ইমান রয়েছে, বরং এসব তাদের একটি বাহানা, এভাবে তারা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য ও ভ্রান্ত মতবাদ বাস্তবায়ন করতে চায়।
❝ধর্মনিরপেক্ষ❞ ধর্মের বলয় থেকে মুক্ত হতে মুসলিম উম্মাহকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পথ চলতে হবে। সেই সাথে তাদের ধোঁকাবাজি মানুষের সামনে তুলে ধরতে ধরনের কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। লেখকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রকাশকদের আন্তরিক হতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাদের ফেতনা থেকে হিফাযত করেন। আমিন।