এসো সুন্নাহর সৌরভে সুরভিত হই—
আবু হুরায়রাহ রাদি. হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,
والذي نفسُ مُحمَّد بيدِه، لا يسمعُ بي أحدٌ من هذه الأمة يهوديٌّ، ولا نصرانيٌّ، ثم يموتُ ولم يؤمن بالذي أُرْسِلتُ به، إلَّا كان مِن أصحاب النار
যার হাতে (আমি) মুহাম্মাদের জীবন তার শপথ করে বলছি, এ উম্মাতের যে কেউ; চাই সে ইয়াহুদি হোক বা খৃষ্টান হোক আমার আগমনের সংবাদ পাওয়ার পর সে আমাকে যে বিষয়সহ পাঠানো হয়েছে তার প্রতি ইমান না এনে মারা গেলো, সে অবশ্যই জাহান্নামি হবে। —সহিহ মুসলিম ১/৯৩, হাদিস নং ১৫৩
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :
নবি ﷺ আল্লাহ তাআলার শপথ করে বলেন, “এ উম্মাতের যে কেউ তার ব্যাপারে শুনবে” অর্থাৎ যারা তার যামানায় উপস্থিত আছে ও তারপরে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়াতে আসবে “চাই সে ইয়াহুদি হোক বা খ্রিষ্টান, অতঃপর সে মারা যাবে কিন্তু তাকে যে বিষয়াবলীসহ পাঠানো হয়েছে তার প্রতি ইমান আনবে না সে অবশ্যই জাহান্নামি হবে। অতএব যে কোনো ইয়াহুদি বা খ্রিষ্টান, অনুরূপভাবে তারা ছাড়া আরো যাদের কাছে নবি ﷺ -এর দাওয়াত পৌঁছব, তারা যদি তার উপর ইমান না এনে মারা যায় তবে তারা অবশ্যই জাহান্নামি হবে। তাতে তারা চিরদিন থাকবে।
আর এখানে বিশেষভাবে ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অন্যান্যদের সতর্ক করার জন্যে । কারণ, ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানরা হলো আহলে কিতাব। তাদের কুফরি করাটা অধিক দোষণীয়। কেননা তারা মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কে এরূপ জানে যেরূপ তারা তাদের সন্তান সম্পর্কে জানে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তাকে (মুহাম্মাদকে) তেমনই চেনে, যেমন তাদের পুত্রগণকে চেনে; কিন্তু তাদের একদল জেনেশুনে সত্য গোপন করে থাকে। (সুরাহ আল-বাকারাহ, আয়াত ১৪৬)
উমার রাদি. ইয়াহুদিদের একজন বিখ্যাত পণ্ডিত আবদুল্লাহ বিন সালামকে রাদি.-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি মুহাম্মাদ ﷺ-কে এমনই চিনেন, যেমন চিনেন আপনার সন্তানদেরকে?’ তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ!; বরং তার চেয়েও বেশী চিনি। কেননা, আকাশের বিশ্বস্ত ফেরেশতা পৃথিবীর একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ হন এবং তিনি তার সঠিক পরিচয় বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ জিবরিল আলাইহিস সালাম ইসা আলাইহিস সালাম-এর নিকট আগমন করেন, অতঃপর আল্লাহ তাআলা তার গুণাবলী বর্ণনা করেন এবং ঐ সবগুলোই তার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এর পরে তিনি যে সত্য নবি এতে আমাদের আর কি সন্দেহ থাকতে পারে। তাকে এক নজর দেখেই চিনতে পারবো না কেন? আমাদের বরং আমাদের সন্তানদের সম্বন্ধে সন্দেহ থাকতে পারে কিন্তু তার নবুওয়াত সম্বন্ধে কোনই সন্দেহ থাকতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
‘‘তারা তার বিষয়ে তাওরাতে ও ইনজিলে লিখিত বক্তব্য দেখতে পায়।’’ (সুরাহ আল-আরাফ, আয়াত ১৫৭)
যারা আহলে কিতাব, যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত গ্রন্থ বিদ্যমান সেই ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের যখন এ অবস্থা, তখন অন্যরা, যাদের কিতাব নেই, যাদের প্রতি কোন আসমানি গ্রন্থ নাযিল হয়নি তাদের জন্য তার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজনতো আরো বেশী উপযোগী। আর তারা তার আহ্বানে সাড়া না দিলে তারা জাহান্নামি হওয়ার ব্যাপারে আরো বেশি হকদার। সুতরাং সবার ওপর ওয়াজিব হলো, তার দ্বীনে প্রবেশ করা এবং তার আনুগত্য মেনে নেওয়া।
হাদিস থেকে শিক্ষা :
→ যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ ﷺ-র আগমনের সংবাদ শোনেনি এবং যার কাছে তার ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি, সে অপারগ, তার আপত্তি গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ সে উপরোক্ত হাদিসের আওতাধীন নয়।
→ রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আনুগত্য করা ওয়াজিব। তার শরিআতের দ্বারা সব শরিআত রহিত হয়ে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি তার সঙ্গে কুফরি করল, অন্য নবিদের প্রতি ইমান তার কোনো উপকারে আসবে না।
→ ইসলামের দ্বারা মৃত্যুর সামান্য পূর্বেও উপকৃত হতে পারবে, যদিও সে মারাত্মক পর্যায়ে রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে, যতক্ষণ তা চাক্ষুষ দেখার পর্যায়ে না পৌঁছবে।
→ নবি ﷺ যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন, তার কোনো বিধান যা অকাট্য হুজ্জাত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে এবং যার ওপর সমস্ত উম্মাহ একমত হয়েছে তা অস্বীকার করা কুফরি।
→ যে ব্যক্তি রাসুল ﷺ-এর নবুয়্যাত ও রিসালাতের কথা শুনার পরও আমার প্রতি ইমান আনবে না, সে যেই হোক না কেন সে কাফির- জাহান্নামি।