একজন মুমিনের জীবনে প্রকৃত সফলতা-
সফলতা মানব জীবনে উত্তরণের একটি অন্যতম হাতিয়ার। ইহলৌকিক জীবনের নানা স্তরে প্রতিষ্ঠা অর্জন করার জন্য আমরা অবিরত সংগ্রাম করি। সংগ্রামী চেতনা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে অতুলনীয় সাহায্য করে। দীর্ঘ অধ্যবসায় বা নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে সফলতা লাভ করা যায় তার একটা সুমিষ্ট স্বাদ আমরা আস্বাদন করি। সফলকাম কৃতি ব্যক্তির প্রতি সামাজিক যে দৃষ্টিভঙ্গি তার সাথে বিফল ব্যক্তির আসমান-যমিন তফাৎ। সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি পৃথিবীতে সম্মান ও মর্যাদার পাত্র। অপরদিকে ব্যর্থ ব্যক্তি সর্বত্র অবহেলা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বস্তু। আমরা সাধারণত পার্থিব জগতের উন্নতি ও সমৃদ্ধির নিরিখে ব্যক্তির সফলতা বিচার করি। অর্থ, জশ, বিত্ত, বৈভব-শৌর্য, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও খ্যাতির মাপকাঠিতেই সফলতা যাচাই করি।
উন্নত চরিত্র, মানবিক মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ প্রভৃতি বিষয়গুলো আমাদের সফলতার গন্ডির বাইরে থাকে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যে যতটা অর্থ, খ্যাতি ও প্রভাবের অধিকারী সে ততই সফল। কেউ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা লাভ করলে আমরা তাকে সফল ব্যবসায়ী বলি। অভিনয় জগতে যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে সে সফল অভিনেতা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যার যত বেশী রোগী তিনি ততো বেশী সফল চিকিৎসক। অতি সম্প্রতি যে বক্তার যত বেশী দাবী কিংবা যার ফেসবুক লাইকারের সংখ্যা সর্বাধিক এবং ইউটিউব এ ফলোয়ার ও সাবস্ক্রাইবার-এর সংখ্যা অধিক তিনি ততই সফল ব্যক্তিত্ব। এসবই প্রধানত আমাদের চোখে সফলতার নির্ণায়ক, যদিও শরিআত বলে অন্য কথা।
এক্ষেত্রে শরিআহ কি বলে?
এক্ষেত্রে শরিআহ কি বলে—সেটা জানতে হলে রাসুল ﷺ-এর একটি হাদিসকে আমাদের সামনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া চার শ্রেণীর মানুষের জন্য :
১ম শ্রেণীর ব্যক্তি হলেন তিনি, আল্লাহ যাকে অর্থ ও জ্ঞান উভয়ই দান করেছেন। সে বিষয়ে তিনি তার রবকে ভয় করেন, তার সম্পদ তিনি তার আত্মীয়-পরিজনদের কাছে পৌঁছে দেন। আর সে ব্যাপারে তিনি আল্লাহর হক সম্পর্কে অবগত। তিনি সর্বোচচ স্তরের অধিকারী।
২য় শ্রেণীর ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন, কিন্তু অর্থ দান করেননি, তিনি সঠিক সংকল্পকারী। তিনি মনে মনে বলেন, যদি আমার অর্থ থাকতো তবে আমিও অমুক ব্যক্তির মতো (সৎ) কাজ করতাম। সেটা তার নিয়তের উপর নির্ভর করছে। ফলে তাদের দুজনের নেকী সমান।
৩য় শ্রেণীর ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ অর্থ দান করেছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। সে অজ্ঞতাবশত তার সম্পদ তছনছ করে। সম্পদের ক্ষেত্রে নিজ রবকে ভয় করে না। নিজ সম্পদ নিকটাত্মীয়দের পৌঁছে দেয় না এবং সম্পদে আল্লাহর হক জানে না। সে হচ্ছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট স্তরের অধিকারী।
৪র্থ শ্রেণীর ব্যক্তি, যাকে অর্থ ও জ্ঞান কিছুই দান করা হয়নি, অতঃপর সে বলে, যদি আমাকে অর্থ দান করা হতো, তবে আমি অমুক ব্যক্তির ন্যায় কাজ করতাম। বস্তুত এটা নির্ভর করছে তার নিয়তের উপর। ফলে তাদের দুজনের পাপ সমান। —সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৩২৫
অর্থাৎ এ জগতের সফলতা আখিরাতের জীবনের সফলতার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং এ জগতে যেটা সুখ-শান্তির উৎস ভাবছি পরলোকে তাই দুঃখ-দুর্দশার কারণ হতে পারে। ডেকে আনতে পারে স্থায়ী ব্যর্থতার চরম অন্ধকার।
প্রকৃতপক্ষে একজন মুমিনের জীবনে প্রকৃত সফলতা সেটাই, যার মাধ্যমে তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তাআলার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করেন। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবন পাড়ি দিয়ে চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনে সুখ ও শান্তি লাভ করেন। আল্লাহ তাআলার নিআমাতপূর্ণ জান্নাত লাভ করে। জাহান্নাম থেকে চিরমুক্তি লাভ করেন।