তারাবির রাকাত সংখ্যা : ভারসাম্যপূর্ণ মতামত

তারাবির রাকাত সংখ্যা : ভারসাম্যপূর্ণ মতামত-

তারাবির রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহি. বলেন,

মূলত তারাবির জন্য নাবি কারিম ﷺ রাকাতের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি রমাদান ও রমাদানের বাইরে তের রাকাতের বেশি পড়তেন না। কিন্তু তাতে কিরাত অনেক দীর্ঘ করতেন।

উমার রাদি. যখন উবাই ইবনু কাব রাদি.—এর ইমামতিতে জামাআতের ব্যবস্থা করলেন তখন উবাই ইবনু কাব রাদি. সাহাবিদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। তবে তিনি যে পরিমাণ রাকাত বৃদ্ধি করেছেন সে পরিমাণ কিরাত হালকা করতেন। কেননা এক রাকাতের মধ্যে কিরাত দীর্ঘ করার চেয়ে দীর্ঘ কিরাতকে ভাগ করে কয়েক রাকাতে পড়লে মুসল্লিদের জন্য সহজ হয়।

উমার রাদি.-এর যমানার পর সালাফের এক জামাআত চল্লিশ রাকাত তারাবি পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আরেক জামাআত ছত্রিশ রাকাত তারাবি পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। এ সব তরিকাই জাইয। যে রাকাত-সংখ্যাই গ্রহণ করা হোক তা-ই উত্তম হবে।

কত রাকাত তারাবি পড়া উত্তম, তা নির্ভর করে মুসল্লিদের অবস্থা বিবেচনার উপর। যে মুসল্লিদের নাবি৷ কারিম ﷺ-এর মত দীর্ঘ কিরাত পড়ে দশ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর পড়ার সহন ক্ষমতা আছে তাদের জন্য বিতরসহ তের রাকাত পড়াই উত্তম। যদি এত দীর্ঘ কিরাতে ধৈর্যধারণ করতে মুসল্লিদের কষ্ট হয় তাহলে কিরাতকে ভাগ করে বিশ রাকাত তারাবি পড়া উত্তম। এ অনুযায়ীই অধিকাংশ মুসলিম আমল করে আসছে। কারণ, দশ রাকাত ও চল্লিশ রাকাতের মধ্যে বিশ রাকাত হল মধ্যম সংখ্যা। আর যদি ছত্রিশ বা চল্লিশ রাকাত পড়ে তাও জাইয হবে। এর কোনো সংখ্যাই না-জাইয নয়। ইমাম আহমাদ রাহি.-সহ একাধিক ইমাম স্পষ্টভাবে একথা বলেছেন। যে মনে করে, তারাবির জন্য নাবি কারিম ﷺ নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, এতে কমবেশি করার কোনো সুযোগ নেই— সে ভুল বুঝেছে।

….أنّ نَفْسَ قِيَامِ رَمَضَانَ لَمْ يُوَقِّتْ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ عَدَدًا مُعَيَّنًا؛ بَلْ كَانَ هُوَ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – لَا يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا غَيْرِهِ عَلَى ثَلَاثَ عَشْرَةِ رَكْعَةً لَكِنْ كَانَ يُطِيلُ الرَّكَعَاتِ فَلَمَّا جَمَعَهُمْ عُمَرُ عَلَى أبي بْنِ كَعْبٍ كَانَ يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً ثُمَّ يُوتِرُ بِثَلَاثِ وَكَانَ يُخِفُّ الْقِرَاءَةَ بِقَدْرِ مَا زَادَ مِنْ الرَّكَعَاتِ لِأَنَّ ذَلِكَ أَخَفُّ عَلَى الْمَأْمُومِينَ مِنْ تَطْوِيلِ الرَّكْعَةِ الْوَاحِدَةِ ثُمَّ كَانَ طَائِفَةٌ مِنْ السَّلَفِ يَقُومُونَ بِأَرْبَعِينَ رَكْعَةً وَيُوتِرُونَ بِثَلَاثِ وَآخَرُونَ قَامُوا بِسِتِّ وَثَلَاثِينَ وَأَوْتَرُوا بِثَلَاثِ وَهَذَا كُلُّهُ سَائِغٌ فَكَيْفَمَا قَامَ فِي رَمَضَانَ مِنْ هَذِهِ الْوُجُوهِ فَقَدْ أَحْسَنَ. وَالْأَفْضَلُ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ أَحْوَالِ الْمُصَلِّينَ فَإِنْ كَانَ فِيهِمْ احْتِمَالٌ لِطُولِ الْقِيَامِ فَالْقِيَامُ بِعَشْرِ رَكَعَاتٍ وَثَلَاثٍ بَعْدَهَا. كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي لِنَفْسِهِ فِي رَمَضَانَ وَغَيْرِهِ هُوَ الْأَفْضَلُ وَإِنْ كَانُوا لَا يَحْتَمِلُونَهُ فَالْقِيَامُ بِعِشْرِينَ هُوَ الْأَفْضَلُ وَهُوَ الَّذِي يَعْمَلُ بِهِ أَكْثَرُ الْمُسْلِمِينَ فَإِنَّهُ وَسَطٌ بَيْنَ الْعَشْرِ وَبَيْنَ الْأَرْبَعِينَ وَإِنْ قَامَ بِأَرْبَعِينَ وَغَيْرِهَا جَازَ ذَلِكَ وَلَا يُكْرَهُ شَيْءٌ مِنْ ذَلِكَ. وَقَدْ نَصَّ عَلَى ذَلِكَ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ الْأَئِمَّةِ كَأَحْمَدَ وَغَيْرِهِ. وَمَنْ ظَنَّ أَنَّ قِيَامَ رَمَضَانَ فِيهِ عَدَدٌ مُوَقَّتٌ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُزَادُ فِيهِ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُ فَقَدْ أَخْطَأ….

|| মাজমুউল ফাতাওয়া— শাইখিল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া, ২২/২৭২ ||

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *