দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ে অক্ষম ব্যক্তির সালাতের ব্যাপারে শারিআতের দিকনির্দেশনা

দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ে অক্ষম ব্যক্তির সালাতের ব্যাপারে শারিআতের দিকনির্দেশনা-

ইমরান ইবনু হুসইন রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আল্লাহর রাসুলুল্লাহ ﷺ—এর কাছে সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেন

صَلِّ قائما، فإن لم تستطع فقاعدا، فإن لم تستطع فعلى جَنْبٍ

দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে, যদি তাও না পার তাহলে পার্শ্বের ওপর।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :

যে ব্যক্তির কোন রোগ থাকে যেমন রক্তক্ষরণ অথবা দাঁড়ানোর সময় ব্যথা অনুভব হওয়ার ন্যায় অপারগতা থাকে তার সালাতের পদ্ধতি হাদীসটি বর্ণনা করছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন যে, সালাতে দাঁড়ানোই হল মূল বিষয়, তবে সক্ষমতা না থাকাবস্থয় বসে সালাত আদায় করবে, যদি বসেও সালাত আদায়ে সক্ষম না হয় তার জন্যে অবকাশ আছে পার্শ্বের ওপর সালাত আদায় করা।

হাদিসের ফাহম :
  • অসুস্থ ব্যক্তির ফরয সালাতের বিভিন্ন স্তরের প্রতি লক্ষ রাখা ওয়াজিব। সুতরাং সে যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয়, ওয়াজিব হলো দাঁড়ানো। কারণ, এটি ফরয সালাতের রুকন। যদিও তা কোন লাঠি বা দেয়াল ইত্যাদির ওপর ভর করে হয় বা হেলান দিয়ে হয়।
  • যদি দাঁড়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে তাকে বসে সালাত আদায় করতে হবে যদিও তা হেলান দিয়ে হোক বা ভর করে হোক। সক্ষম হলে রুকু ও সিজদা করবে। আর যদি বসাও সম্ভব না হয় বা কষ্টকর হয়, তখন সে পার্শ্বের ওপর সালাত আদায় করবে। ডান পাশ অধিক উত্তম। যদি কিবলার দিক চিত হয়ে শুয়ে সালাত আদায় করে তাও বিশুদ্ধ। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, মাথা দিয়ে ইশারাহ করে সালাত আদায় করবে। তখন সিজদার জন্য রুকু করার ইশারাহ হতে অধিক ঝুকবে। যাতে দুই রুকনের মাঝে প্রার্থক্য হয়ে যায়। এ ছাড়াও আরো একটা কারণ হলো— সিজদা রুকু থেকে অধিক নিচু করে হয়ে থাকে।
  • অক্ষম বা কষ্টকর হওয়া ছাড়া এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে যাবে না বা তা পালন করবে না। কারণ, এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে যাওয়া সক্ষমতা না থাকার সাথে সম্পৃক্ত।
  • যে সব অপারগতার কারণে ফরয সালাত বসে পড়া বৈধ তা হলো— এমন কষ্ট যার কারণে সালাতের খুশু নষ্ট হয়। কারণ, খুশু হলো সালাতের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।
  • যে সব অপারগতার কারণে ফরয সালাত বসে আদায় করা বৈধ তা অনেক। শুধু অসুস্থতার সাথে খাস নয়। যেমন, ছাদ ছোট হওয়া যার থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়, নৌকা, লঞ্চ, গাড়ী, বিমান ইত্যাদিতে সালাত আদায়ের প্রয়োজন হলে এবং দাড়াতে অক্ষম হলে। এগুলো সবই অপরাগতা যা বসাকে বৈধতা দেয়।
  • যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত যিম্মা (দায়িত্ব) থেকে ছুটবে না। অসুস্থ ব্যক্তি যদি মাথা দ্বারা ইশারা করতে না পারে তাহলে সে তার দুই চোখ দ্বারা ইশারা করবে। তখন সে রুকুর জন্য সামান্য মাথা ঝুঁকাবে এবং সিজদার জন্য তার থেকে বেশি ঝুঁকাবে। যদি মুখে কিরাত পড়তে পারে তাহলে তাই করবে অন্যথায় মনে মনে পড়বে। আর যদি চোখে ইশারা করে সালাত আদায় করতে অক্ষম হয় তবে অন্তর দ্বারা সালাত আদায় করবে।

হাদিসটির ব্যাপকতার দাবি হচ্ছে, মুসল্লি যেভাবে বসতে চাইবে সেভাবে বসে সালাত আদায় করবে। এটি ইজমা। তবে কোনটা উত্তম তা নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। জমহুরের মত হলো, সে দাঁড়ানোর স্থানে ও রুকু থেকে উঠার পর চারজানু হয়ে বসবে। আর সিজদা থেকে উঠার স্থানে পা বিছিয়ে সালাত আদায় করবে।

আল্লাহ তাআলা ও তার রাসুল ﷺ—এর আদেশসমূহ সক্ষমতা ও সামর্থ অনুযায়ী পালন করবে। আল্লাহ তাআলা কাউকে তার ক্ষমতার বাহিরে আদেশ দেন না।

ইসলামী শরীয়ত সহজ ও সহনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْحَرَجٍ

তোমাদের ওপর দ্বীনের মধ্যে কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। —সুরাহ হজ, আয়াত ৭৮

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

يُرِيدُ اللَّهُ أَن يُخَفِّفَ عَنكُمْ

আল্লাহ তোমাদের থেকে সহজ করতে চায়। —সুরাহ আন-নিসা, আয়াত ২৮

কাজেই আল্লাহ তাআলার রহমত তার বান্দাদের প্রতি খুবই প্রশস্ত।

উল্লেখিত বিধানগুলো হলো ফরয সালাতের বিধান। আর নফল সালাত কোন ওযর ছাড়া বসে আদায় করা বৈধ। তবে যদি ওযরের কারণে হয় তার পুরো সাওয়াব লাভ করবে। আর যদি ওযর ছাড়া হয়, তখন দাঁড়ানো ব্যক্তির সালাতের অর্ধেক সাওয়াব পাবে। যেমনটি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *