টাকা কেনাবেচা কি জায়িয?

টাকা কেনাবেচা কি জায়িয?

প্রশ্ন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ সম্মানিত ওস্তাদ মহোদয়, আমি আমি আমার পরিবারের একই সাথে ছোটছেলে এবং একমাত্র ছেলে। আমার বাবা ছোটকাল থেকে একটা ব্যবসা করে যাচ্ছেন এবং সেটা হলো ভাংতি টাকার ব্যবসা। এই ব্যবসাটা মূলত ব্যাংক থেকে ছোট টাকা এনে (১০,২০,৫০,১০০) বড় বড় মার্কেট, সুপার শপ বা হোটেলে সাপ্লাই দেয়। অর্থনৈতিক অবস্থা যেহেতু আমাদের পুরোটাই সুদভিত্তিক এবং পুঁজিবাদী, তাই সাপ্লাই করা দোকানে প্রচুর টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণ টাকা নিতে হয়। আর ব্যাংক থেকে প্রতিটা টাকা (ছেড়াগুলো) পরিবর্তন করে দেয় না বলে সেই টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে অতিরিক্ত লাভ দিয়ে বিক্রি করতে হয়। তাই, এই টাকা যেসব দোকানে সাপ্লাই দেয়া হয়, সেখান থেকে অতিরিক্ত কিছু লাভ দেয় মূল টাকার সাথে। এখন এই ব্যবসার বিধান কী? হারাম হলে এর প্রতিকারের উপায় কী? অর্থাৎ দোকান, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট তারা কোথায় এত ভাংতি টাকা পাবে এবং এসবের মাঝে ছেড়াগুলো কী করবে? এখানে আমি মোটেই বোঝাতে চাচ্ছি না যে এটা বৈধ হওয়ার দাবি রাখে। যেহেতু এই বিধান মুহকাম (স্পষ্ট)। আর এই ব্যবসাটা সন্দেহযুক্ত হলেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্দেহযুক্ত জিনিস গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আমি এখন মোটামোটি প্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার বাবার দ্বীনের মৌলিক পরিপূর্ণ জ্ঞান না-থাকায় তখন এই ব্যবসা ছাড়েননি। কিন্তু এখন তিনি বয়োঃবৃদ্ধ। তাই অন্য কোনোদিকে যাচ্ছেনও না। বিষয়টা এমনো নয় যে, উনার প্রবল ইচ্ছা এটা ছাড়ার। এখন প্রশ্ন হলো আমি একজন তালিবুল ইলম আমার জার্নি এখনো ভালো করে শুরুও হয়নি। আমি এখন কী করব, আমি কি আমার পড়াশুনা বাদ দিয়ে এই ব্যবসা পরিবর্তন করব না কি ইলম অর্জনে মনোনিবেশ করব। যদি পড়ালেখা না-করি তাহলে কি আমার ধরে নিতে হবে যে, আল্লাহ আমার তাকদিরে ইলম অর্জন রাখেননি! আমি ফিতনার যুগে নিজেকে ফিতনা থেকে মুক্ত রাখার জন্য ইলম অর্জন করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। আমি এখন কী করব? আমি প্রচুর হতাশায় ভুগছি। সরাসরি কোনো আলিমের সাথে বসে কথা বলা বা শেয়ারের সাহস পাই না! দয়া করে আমাকে সঠিক এবং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত দিন। মাআসসালাম।

উত্তর : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। যেহেতু বর্তমানে প্রচলিত কাগজের নোট দেশপ্রচলনে সমন (পণ্যের বিনিময়) হিসেবে গণ্য হয়, তাই এ জাতীয় নোটের ক্রয়-বিক্রয় বাইয়ুস সরফের অন্তর্ভুক্ত হবে। বাইয়ুস সরফের মাঝে কমবেশি লেনদেন সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই আমাদের দেশে প্রচলিত পুরাতন ছেঁড়াফাটা টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে অন্যান্য পণ্যের মতো কমবেশি করে মূল্য নির্ধারণপূর্বক বিক্রি করা সুদি লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত। ফলে এটা নাজায়িয ও হারাম

এ ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উক্ত সার্ভিস দেয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো তো বিনামূল্যেই সার্ভিসটা দেয়। তাই, এ ক্ষেত্রে সুদি লেনদেন করার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। এরপরও একদম অপারগতার ক্ষেত্রে বদলকারীর পরিশ্রম ও ডাক খরচবাবদ কিছু টাকা বেশি নেয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে স্পষ্টভাবে সেই ‘বাবদ’ উল্লেখ করে দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত টাকাটা ব্যক্তির পারিশ্রমিক হিসেবে তখনই নেয়া বৈধ হবে, যদি মূল টাকার পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে অতিরিক্ত টাকার পরিমাও না-বাড়ানো হয়। কারণ, ৫০০ টাকা লেনদেনে যে পরিশ্রম হয়, ১০০০ টাকা লেনদেনে একই পরিশ্রম হয়। তাই পারিশ্রমিক হিসেবে অতিরিক্ত টাকা নিতে চাইলে সেটা আলাদাভাবে চুক্তি করে নেবে। মূল টাকার পরিমাণের সাথে এর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারবে না। নয়তো সেটা সুদ হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَبِيعُوا الذَّهَبَ بِالذَّهَبِ وَلاَ تَبِيعُوا الْوَرِقَ بِالْوَرِقِ إِلاَّ مِثْلاً بِمِثْلٍ وَلاَ تُشِفُّوا بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ

‘তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রি করো না এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করো না সমান সমান পরিমাণ ব্যতীত। আর তোমরা সেটার এক অংশকে অন্য অংশ থেকে বেশি কোরো না।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ২১৭৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩৯৪৭] তিনি আরও বলেছেন,

الدِّينَارُ بِالدِّينَارِ لاَ فَضْلَ بَيْنَهُمَا وَالدِّرْهَمُ بِالدِّرْهَمِ لاَ فَضْلَ بَيْنَهُمَا ‏

‘দিনারের (স্বর্ণমুদ্রা) বিনিময়ে দিনার—উভয়ের মাঝে কোনোটি বেশি হতে পারবে না। আর দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম—উভয়ের মাঝে কোনোটি বেশি হতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩৯৬১)

যেহেতু আপনি প্রাপ্তবয়স্ক, সে হিসেবে আপনাকে এখন পরিবারের দায়িত্ব নেয়া শুরু করতে হবে। ইলম অর্জনের পাশাপাশি কীভাবে হালাল উপার্জন করা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে ইলম অর্জনের পাশাপাশি উপার্জন করাও সম্ভব। আল্লাহ আপনার জন্য হালাল উপার্জন ও ইলমের পথকে সহজ করুন।

[দলিল : সহিহ বুখারি হাদিস নং : ২১৭৭; মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং : ২৮১০]

প্রশ্নকর্তা : নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক

বয়স : ১৭

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *