ব্যাবহারিক খাতায় প্রাণীর ছবি আঁকা যাবে কি?

ব্যাবহারিক খাতায় প্রাণীর ছবি আঁকা যাবে কি?

প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। আমার এক বন্ধু জানতে চাইছে যে, HSC Biology-তে প্র্যাক্টিকেল খাতায় অনেক প্রাণীর ছবি আঁকার জন্য বলা হয়। এ সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।। কোনো প্রাণীর ছবি আঁকা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। তবে মানুষ প্রাণহীন প্রকৃতির ছবি আঁকতে পারবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যারা চিত্রাঙ্কন (প্রাণীর) করে, তাদের কিয়ামাতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে—তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্মা ও জীবন দাও।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৪৭৮৩]

আইশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আসলেন। ঘরের দরজায় এমন এক পর্দা টানানো ছিল, যার মাঝে প্রাণীর ছবি আঁকা ছিল। তিনি দেখামাত্র পর্দাটা ছিড়ে ফেললেন। তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন—হে আইশাহ, কিয়ামাতের দিন সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেয়া হবে সেসব লোকদের, যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করে কিছু তৈরি করে। আইশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন—আমি ওই পর্দা কেটে একটি বা দুটো বালিশ তৈরি করি। [সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৫৪৯৮]

সম্মানিত প্রশ্নকারী ভাই, ইসলামে ছবি আঁকা নিষিদ্ধ। কিন্তু যেসব মূলনীতির আলোকে ও প্রয়োজনের তাগিদে ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়ে সাময়িক অববকাশ দেয়া হয়, সেখানে দেখতে হবে প্রয়োজন কতটুকু এবং তা শরয়ি কি না। এই সাবজেক্টে পড়া যদি একান্ত প্রয়োজনই হয়, তাহলে প্রয়োজনসাপেক্ষে যতটুকু সম্ভব পূর্ণাঙ্গ ছবি না এঁকে ছবির অংশবিশেষ আঁকার চেষ্টা করবেন। যেহেতু একাধিক হাদিসে ছবি আঁকা এবং অংকিত ছবির ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ছবি আঁকতে যাবেন না। ইমাম ইবনু কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

وكذلك إذا كان فى ابتداءِ التَّصوير صورةُ بدنٍ بلا رَأسٍ، أو رَأْسٍ بلا بَدَنٍ، أو جُعلَ له رأسٌ وسائرُ بدنِه صورةُ غيرِ حيوانٍ، لم يدخُلْ فى النَّهى؛ لأنَّ ذلك ليسَ بصُورةِ حيوانٍ

‘ছবি আঁকার শুরুতেই যদি মাথা ছাড়া দেহ বা দেহ ছাড়া মাথা আঁকা হয়, কিংবা মাথা আঁকা হয়েছে কিন্তু দেহ প্রাণীর নয়, এমতাবস্থায় সেটা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কারণ, তা কোনো প্রাণীর আকৃতি নয়।’ [ইমাম ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনি, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ২০১]

তবে যদি ছবির অংশবিশেষ বা এমন পূর্ণ ছবি যার চেহারার অঙ্গগুলো অস্পষ্ট করে আঁকা সম্ভব না হয়, তাহলে জরুরত সাপেক্ষে পূর্ণ ছবি আঁকার সুযোগ রয়েছে। তবে তাতে চেহারার মূল অঙ্গগুলো অস্পষ্ট করে রাখতে হবে। তাও সম্ভব না-হলে পূর্ণ ছবি আঁকতে পারবেন। এটা শুধু একান্ত অপারগতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদও এমন অপারগ অবস্থায় পূর্ণ ছবি আঁকা বৈধ বলেছেন। [ফাতওয়া নং : ২৪০৮৩৭, ইসলামকিউএ]

আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ কাওকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না—لا يكلف الله نفساً إلا وسعها।’ তবে উত্তম হলো যথাসম্ভব পরিহার করে থাকা। এ ক্ষেত্রে বৈধতাটা এ জন্যই যে, এতে মূলত ছবিকে সম্মান করার উদ্দেশ্য থাকে না, বরং শুধু প্রয়োজনের তাগিদে অনুশীলনের জন্যই হয়ে থাকে। অতএব, এর জন্য কোনো শাস্তি হবে না, ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য, এই অবকাশের ফলে ছবি আঁকা বৈধ হয়ে যাবে না, বরং এর কারণে যেই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হতো, আশা করা যায় আল্লাহ সেটা থেকে রেহাই দেবেন। তবে যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

الضرورات تبيح المحظورات

والله اعلم بالصواب

প্রশ্নকর্তা : শাহীন আহমেদ

বয়স : ১৮

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *