হকের পথ– পরীক্ষার পথ; অহংকার যেখানে পরিত্যাজ্য

হকের পথ– পরীক্ষার পথ; অহংকার যেখানে পরিত্যাজ্য:

মুমিনের সাথে আপনারা আচরণ এতো কঠোর কেন? আপনি যদি মনে করেন আপনি হকের ওপর রয়েছেন, তবে তো আপনাকে আরও বেশি নরম হতে হবে, আরও বেশি ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে। কারণ, হিদায়াতের গন্ডি থেকে বের করে দেওয়া আল্লাহ তাআলার কাছে কোন ব্যাপারই না এবং এতে আল্লাহ তাআলার কোন কিছুর পরোয়াও নেই। হিদায়াত গ্যারান্টেড কিছু না। আমাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয় উল্টো। হকের পথে আছি, এই ফিলিংস হলে আমরা অনেক উগ্র হয়ে যাই। যারা সত্যের পথে নেই তাদের নিয়ে ট্রলিং, নীচু নজরে দেখা, হকের অনুভূতিগুলো অহংকারের চাদরে পরিণত হয় নিমেষেই। আহলুস সুন্নাহর অধিভুক্ত মানহাজ-মাসলাকগুলোর ব্যাপারে আমাকেই সবচে বেশি সহনশীল হতে হবে। কারণ, আমি মনে করছি, আমি হকের পথে আছি।

আল্লাহ তাআলার সবচে কঠিন নাম আমার কাছে লাগে ‘আস-সামাদ’–অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তাআলা কারও মুখাপেক্ষী না। কোনো কিছুর কাছে ঠ্যাকা না। আমি ভাবছি, আমি দ্বীনের অনেক কাজ করছি। এসব কাজের জন্য আল্লাহ তাআলা আমার মুখাপেক্ষী না। যেকোন সময় আমার পরিণতি হতে পারে বারসীসা, বালআম ইবনু বাউরাদের মতো। যখনই আল্লাহ তাআলার চাদর (অহংকার) ধরে টান দিব, আল্লাহ তাআলা আমাকে রাস্তার ঘৃণ্য কুকুরে পরিণত করবেন।

সিরিয়ার প্রখ্যাত আলিম ড. সাঈদ রমাদান বুতি। জি! আপনি ঠিকই ধারণা করছেন; তিনি ‘ফিকহুস সীরাহ’ এর গর্বিত লেখক। গ্রন্থটি ১৯৬৮ সালে লেখা। অসাধারণ গ্রন্থ। আরব-হিন্দের অনেক বড় বড় আলিম গ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যে গ্রন্থের পাতায় পাতায় ইখলাস, নবির প্রতি ভালোবাসা আর দ্বীনের ব্যাপারে আপোষহীনতার ছাপ যেন ঠিকরে পড়ে। সেই ড. বুতি আরব বসন্তের সময় পক্ষ নিলো কাফির বাশার আল-আসাদের! বাশার শিয়া নুসাইরি ফিরকার, যাদেরকে অন্যান্য শিয়ারাও কাফির মনে করে। সুন্নীদের উপর তার নৃশংস গণহত্যা ও নির্যাতনের পরও ড. বুতি শেষ বয়সে এমন একটা মারাত্মক জঘন্য ভুল করলেন (বাধ্য করা হয়েছিল কিনা আল্লাহ জানেন)! এই অবস্থার উপরই এক মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে ড. বুতির মৃত্যু হয়।

আখিরাতের হিসাব তো আখিরাতে। দুনিয়ার হিসেবে ইসলাম ও মুসলিমের স্বার্থের বিরুদ্ধে তার অবস্থান কোনো ব্যাখ্যাতেই মেনে নেবার মতো না। তবে বইটি আমি পড়তে সাজেস্ট করবো। একজন মহীরুহ আলিমের করুণ পরিণতি দেখার জন্য হলেও এবং নিজের ভিতর ভয় জাগানোর জন্য। এমন আপোসহীন সীরাহ লেখার পর যদি এত বড় আলিমের পরিণতি এমন হয়, আমি তাহলে কে? কী আমার অবস্থান?! আমি কী এমন করেছি দ্বীনের জন্য যে হিদায়াতকে আমি পৈতৃক সম্পত্তি মনে করছি? নিজে বড় বড় গুনাহে লিপ্ত থেকে অনেক ছোট গুনাহে লিপ্তদের নিয়ে ট্রল, টিটকারি করছি (দাওয়াহ অন্য জিনিস)? ইমান নিয়ে হিদায়াত নিয়ে আমার ভিতর ভয় নেই?

হে আল্লাহ! আমাদেরকে পরীক্ষা থেকে বাঁচান। আকল নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচান। আর এমন জুলুম থেকে বাঁচান যে জুলুমের মুখে গোমরাহী স্বীকার করে নিতে হয়। আরও কঠিন পরীক্ষা আসার চেয়ে ইমান নিয়ে বারযাখের জীবনই আমাদের বেশি পছন্দের।

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *