সেলিব্রিটির প্যারামিটার! সত্যিকারের সেলিব্রিটিদের বৈশিষ্ট্য ও তাদের মর্যাদা

সেলিব্রিটির প্যারামিটার! সত্যিকারের সেলিব্রিটিদের বৈশিষ্ট্য ও তাদের মর্যাদা

ফেইক সেলিব্রিটিদের ভিড়ে সত্যিকারের সেলিব্রিটিদেরকে আজ আমরা হারাতে বসেছি। এজন্য সময়ের দাবী হলো সত্যিকারের
সেলিব্রিটিদের আলোচনা উম্মাহ-এর সামনে নিয়ে আসা, যাতেকরে মানুষ তাদেরকে চিনতে পারে ও অনুসরণ করতে পারে।

সত্যিকারের সেলিব্রিটিদের কিছু বৈশিষ্ট্য ও তাদের মর্যাদা

একজন সত্যিকারের সেলিব্রিটিদের কিছু বৈশিষ্ট্য ও তাদের মর্যাদা তুলে ধরেছি। যেনো তাদেরকে চিনে নেওয়া আমাদের জন্য সহজ হয়।

আল্লাহর দৃষ্টিতে সত্যিকারের সেলিব্রিটিরা ইমানের ক্ষেত্রে মুকতাদা (অনুসরণীয়) হবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاِنۡ اٰمَنُوۡا بِمِثۡلِ مَاۤ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖ فَقَدِ اهۡتَدَوۡا ۚ وَ اِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا هُمۡ فِیۡ شِقَاقٍ ۚ فَسَیَکۡفِیۡکَهُمُ اللّٰهُ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ

তোমরা যেরূপ ইমান এনেছ তারাও যদি সেরূপ ইমান আনে, তবে নিশ্চয় তারা হিদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা বিরোধিতায় লিপ্ত। সুতরাং তাদের বিপক্ষে আপনার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। — [সুরাহ আল-বাকারাহ, আয়াত ১৩৭]

আল্লাহর দৃষ্টিতে সত্যিকারের সেলিব্রিটির মাঝে ইসলামের আদব ও শিষ্টাচার পূর্ণমাত্রায় থাকতে হবে। সেইসাথে তাকওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَغُضُّوۡنَ اَصۡوَاتَهُمۡ عِنۡدَ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ امۡتَحَنَ اللّٰهُ قُلُوۡبَهُمۡ لِلتَّقۡوٰی ؕ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ

আল্লাহর রাসুলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে আল্লাহ-ভীরুতার জন্য পরীক্ষা করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। — [সুরাহ আল-হুজরাত, আয়াত ৩]

ইমান ও ইসলামের যাবতীয় বিষয় তার কাছে পছন্দনীয় ও প্রিয় হতে হবে। তাদের হৃদয় ইমানের সাজে সজ্জিত হবে। কুফর, শিরক, নিফাক, বিদআত, আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানি তার কাছে ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ لٰکِنَّ اللّٰهَ حَبَّبَ اِلَیۡکُمُ الۡاِیۡمَانَ وَ زَیَّنَهٗ فِیۡ قُلُوۡبِکُمۡ وَ کَرَّهَ اِلَیۡکُمُ الۡکُفۡرَ وَ الۡفُسُوۡقَ وَ الۡعِصۡیَانَ ؕ اُولٰٓئِکَ هُمُ الرّٰشِدُوۡنالرّٰشِدُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰهِ وَ نِعۡمَۃً ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ

কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ইমান (বিশ্বাস)কে প্রিয় করেছেন এবং ওকে তোমাদের হৃদয়ে সুশোভিত করেছেন। আর কুফরি (অবিশ্বাস), পাপাচার ও অবাধ্যতাকে তোমাদের নিকট অপ্রিয় করেছেন। ওরাই সৎপথ অবলম্বনকারী। (এটা) আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ; আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। — [সুরাহ আল-হুজরাত, আয়াত ৮]

কুফরি শক্তির বিপক্ষে সেলিব্রিটিরা হবে অত্যন্ত কঠোর। পারস্পরিক তারা হবে সহানুভূতিশীল। তারা রুকু-সিজদাকারী তথা সালাত আদায়কারী হবে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করবে প্রত্যেক কাজে। তাদের চেহারায় আল্লাহর কাছে নত হওয়ার নিদর্শন পরিলক্ষিত হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰهِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَهُمۡ تَرٰىهُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰهِ وَ رِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاهُمۡ فِیۡ وُجُوۡهِهِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُهُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ وَ مَثَلُهُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ کَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِهٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِهِمُ الۡکُفَّارَ ؕ وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡهُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল; আর তার সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত অবস্থায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করতে দেখবে। তাদের মুখমন্ডলে সিজদার চিহ্ন থাকবে, তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপই এবং ইঞ্জীলেও। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারা গাছ, যা নির্গত করে কিশলয়, অতঃপর তাকে শক্ত করে এবং তা পুষ্ট হয় ও দৃঢ়ভাবে কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে যায়; যা চাষীদেরকে মুগ্ধ করে। এভাবে (আল্লাহ বিশ্বাসীদের সমৃদ্ধি দ্বারা) অবিশ্বাসীদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। ওদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের। — [সুরাহ আল-ফাতহ, আয়াত ২৯]

এই আয়াতের প্রত্যেকটি অংশ সাহাবায়ে কিরামদের মাহাত্ম্য, ফযিলত, আখিরাতের ক্ষমা এবং তাদের মহান প্রতিদান লাভের কথাকে সুস্পষ্ট করে।

সত্যি কারের সেলিব্রিটিরা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত হবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ وَ سَلٰمٌ عَلٰی عِبَادِهِ الَّذِیۡنَ اصۡطَفٰی.

বলুন, সকল প্রশংসা আল্লাহরই এবং শান্তি তার মনোনীত বান্দাদের প্রতি! — [সুরাহ আন-নামল, ৫৯]

তাদের দ্বারা ভুলত্রুটি হলেও তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়। তারা কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

ثُمَّ اَوۡرَثۡنَا الۡکِتٰبَ الَّذِیۡنَ اصۡطَفَیۡنَا مِنۡ عِبَادِنَا ۚ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٌ لِّنَفۡسِهٖ ۚ وَ مِنۡهُمۡ مُّقۡتَصِدٌ ۚ وَ مِنۡهُمۡ سَابِقٌۢ بِالۡخَیۡرٰتِ بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَضۡلُ الۡکَبِیۡرُ ﴿ؕ۳۲﴾

তারপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম তাদেরকে, যাদেরকে আমার বান্দাদের মধ্য থেকে আমি মনোনীত করেছি; তবে তাদের কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ মধ্যমপন্থী এবং কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণের কাজে অগ্রগামী। এটাই তো মহাঅনুগ্রহ। — [সুরাহ আল-ফাতির, আয়াত ৩২]

তাদের ভেতর প্রকৃত হিজরত ও নুসরাত-এর বৈশিষ্ট্য থাকবে। তারা সত্যের অনুসারী হবে। ফলে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ وَ اَعَدَّ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য। — [সুরাহ আত-তাওবাহ, আয়াত ১০০]

উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যসহ সাহাবায়ে কিরামদের আরো যে সকল বৈশিষ্ট্য কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে- সবগুলোই হলো সেলিব্রিটির প্যারামিটার। আর এই প্যারামিটারের নিরিখে যারা সত্যিকারের সেলিব্রিটি, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা উল্লেখ করছি।

ইমরান ইবনু হুসাইন রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ .‏

আমার উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ আমার যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। — [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬৫০]

আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ فَيَغْزُوْ فِئَامٌ مِنْ النَّاسِ فَيَقُوْلُوْنَ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيُفْتَحُ لَهُمْ ثُمَّ يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ فَيَغْزُوْ فِئَامٌ مِنْ النَّاسِ فَيُقَالُ هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيُفْتَحُ لَهُمْ ثُمَّ يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ فَيَغْزُوْ فِئَامٌ مِنْ النَّاسِ فَيُقَالُ هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيُفْتَحُ لَهُمْ

লোকেদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের জন্য বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন? তারা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর জনগণের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য লাভ করেছেন? তখন তারা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগণের সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য প্রাপ্ত হয়েছেন? বলা হবে আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। — [সহিহুল বুখারি, হাদিস নং ৩৬৪৯]

উপরোল্লিখিত হাদিসের অর্থ বুঝতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্য একটা হাদিস সামনে রাখা প্রয়োজন মনে করছি, তিনি বলেন,

لا تزالون بخير ما دام فيكم من رآني وصاحبني

তোমাদের মাঝে যতদিন এমন ব্যক্তি থাকবে যে আমাকে দেখেছে সুহবাত লাভ করেছে, ততদিন তোমাদের মাঝে কল্যাণ বিদ্যমান থাকবে। — [মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবাহ, ১৭/৩০৮, হাদিস নং ৩৩০৮৪, প্রকাশনী : দারুল কিবলাহ]

সত্যিকারের সেলিব্রিটিদের ব্যাপারে আল্লাহর নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَمَعْنَى قَوْلِهِ ‏”‏ نَصِيفَهُ ‏”‏ يَعْنِي نِصْفَ الْمُدِّ ‏.‏

আমার সাহাবিদের তোমরা গালি দিও না। যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার শপথ! তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও দান-খাইরাত করে তবে তা তাদের কারো এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ দান-খাইরাতের সমান মর্যাদা সম্পন্ন হবে না। — [জামিউত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৮৬১]

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لاَ تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا بَعْدِي فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ فَيُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏

সাবধান! আমার সাহাবিদের বিষয়ে আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাদেরকে (গালি ও বিদ্রূপের) লক্ষ্যবস্তু বানিও না। যেহেতু যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি ভালবাসার খাতিরেই তাদেরকে ভালবাসল। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি শত্রুতা ও হিংসাবশেই তাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করল। যে ব্যক্তি তাদেরকে কষ্ট দিল, সে আমাকেই কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে আল্লাহ তাআলাকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ্‌ তাআলাকে কষ্ট দিল, শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা তাকে পাকড়াও করবেন। — [জামিউত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৮৬২]

সেসকল সত্যিকারের সেলিব্রিটিদের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদি. বলেন,

مَنْ كَانَ مُسْتَنًّا فليسن بِمَنْ قَدْ مَاتَ فَإِنَّ الْحَيَّ لَا تُؤْمَنُ عَلَيْهِ الْفِتْنَةُ. أُولَئِكَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانُوا أَفْضَلَ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَبَرَّهَا قُلُوبًا وَأَعْمَقَهَا عِلْمًا وَأَقَلَّهَا تَكَلُّفًا اخْتَارَهُمُ اللَّهُ لِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ وَلِإِقَامَةِ دِينِهِ فَاعْرِفُوا لَهُمْ فَضْلَهُمْ وَاتَّبِعُوهُمْ عَلَى آثَارِهِمْ وَتَمَسَّكُوا بِمَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ أَخْلَاقِهِمْ وَسِيَرِهِمْ فَإِنَّهُمْ كَانُوا عَلَى الْهَدْيِ الْمُسْتَقِيمِ.

যে ব্যক্তি কারো কোন পথ-পদ্ধতি অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ (দীনের ব্যাপারে) ফিতনাহ হতে মুক্ত নয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ, যারা এ উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসেবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক দিয়ে এবং দূরে ছিলেন কৃত্রিমতার দিক থেকে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তার প্রিয় রসূলের সাথী ও দীন কায়িমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফাযীলাত ও মর্যাদা বুঝে নাও। তাদের পদাংক অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মজবুত করে আঁকড়ে ধরো। কারণ তারাই (আল্লাহ ও তার রসূলের নির্দেশিত) সহজ-সরল পথের পথিক ছিলেন। — [মিশকাততল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৯৩]

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণের মতো ইমানওয়ালা সেলিব্রিটি হওয়ার তাওফিক দান করেন। আমিন।

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *