আদাবুল কালাম : কথা বলার আদব

আদাবুল কালাম : কথা বলার আদব

আল্লাহতালা মানুষকে অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করেছেন থেকে কথা বলার তথা বাকশক্তি দিয়ে। যাতে করে তারা পরস্পর একে একে অপরকে বুঝতে পারে ও বুঝাতে পারে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

اَلرَّحۡمٰنُ عَلَّمَ الۡقُرۡاٰنَ خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ ۙ عَلَّمَہُ الۡبَیَانَ

অনন্ত করুণাময় (আল্লাহ); তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। – ১

এটা আল্লাহ তাআলার একটা বড় অনুগ্রহ ও নিআমাহ। এখন মানুষের উচিত এই অনুগ্রহ ও নিআমাতের শুকরিয়া আদায় করা।

যেভাবে এই নিআমাতের শুকরিয়া আদায় করা যেতে পারে :

  • ১. কথা বলার সময় সুন্দর শব্দ চয়ন করবে :

কথা বলার সময় ব্যক্তি উত্তম ও সুন্দর শব্দচয়ন করবে, যাতে করে শয়তান তার কথাকে কেন্দ্র করে মানুষের মাঝে কোন ফিতনাহ ও অকল্যাণ ছড়ানোর সুযোগ না পায়। শয়তানের জন্য এই সুযোগ কোনোভাবেই রাখবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ قُلۡ لِّعِبَادِیۡ یَقُوۡلُوا الَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ یَنۡزَغُ بَیۡنَہُمۡ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ کَانَ لِلۡاِنۡسَانِ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا.

আর আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন এমন কথা বলে, যা অতি সুন্দর। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করে;
নিশ্চয় শয়তান মানুষের স্পষ্ট শত্রু। -[২]

  • ২. কল্যাণকর ও উপকারী বিষয়ে; কমপক্ষে বৈধ কথা বলবে :

যদি কোন কথা কল্যাণকর অথবা কল্যাণকর হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে চুপ থাকাকেই নিজের কর্তব্য মনে করবে। অনুপকারী, অকল্যাণকর ও অবৈধ কথা বলবেনা।

আবু শুরায়হ আদাবি রাদি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কথা বলেছিলেন, তখন আমার দুকান শুনছিল ও আমার দুচোখ দেখছিল। তিনি বলছিলেন,

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ.‏ قَالَ وَمَا جَائِزَتُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهْوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ.‏

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান দেখায় তার প্রাপ্যের বিষয়ে। জিজ্ঞেস করা হলো: মেহমানের প্রাপ্য কী, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, একদিন একরাত ভালভাবে মেহমানদারী করা আর তিন দিন হলে (সাধারণ) মেহমানদারী, আর তার চেয়েও অধিক হলে তা হল তার প্রতি দয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। – [৩]

  • ৩. যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা বলবেনা :

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ لَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ اِنَّ السَّمۡعَ وَ الۡبَصَرَ وَ الۡفُؤَادَ کُلُّ اُولٰٓئِکَ کَانَ عَنۡہُ مَسۡـُٔوۡلًا

আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। – [৪]

  • ৪. খারাপ কথা বলবেনা :

মনে রাখবে, বক্তার একটা বক্তব্যই তাকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। অনেক বক্তব্যই তার বক্তাকে ধ্বংস করেছে।

আবু হুরাইরাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে,

إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ فِيهَا يَزِلُّ بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ الْمَشْرِقِ.

নিশ্চয় বান্দা পরিণাম চিন্তা ব্যতিরেকেই এমন কথা বলে, যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশী। [৫]

নেক আমল করা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি কুফরি কথাবার্তা বললে তা তাকে জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে পৌঁছে দিবে ।

  • ৫. কথাবার্তার সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত আওয়াজ উচ্চ করবে না :

وَ اقۡصِدۡ فِیۡ مَشۡیِکَ وَ اغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِکَ ؕ

আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর। -[৬]

  • ৬. স্পষ্ট ভাবে কথা বলবে:

আইশাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُحَدِّثُ حَدِيثًا لَوْ عَدَّهُ الْعَادُّ لَأَحْصَاهُ.

নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে কথা বলতেন যে, কোন গণনাকারী গুনতে চাইলে তার কথাগুলি গণনা করতে পারত। – [৭]

অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন,

ولم يكن يسرد الحديث كسردكم

তিনি তোমাদের মতো দ্রুত কথা বলতেন না। -[৮]

  • ৭. কেবল সত্যটাই বলবে, মিথ্যা বলবে না:

আবদুল্লাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يَكُونَ صِدِّيقًا، وَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ، حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا.‏

সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের উপর কায়িম থেকে অবশেষে সিদ্দীক -এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহ্‌র কাছে মহামিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায়। -[৯]

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যে বাকশক্তি নামক নিআমাত দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করেন, সেইসাথে কথা বলার সময় ❝কথা বলার আদব❞—এর প্রতি লক্ষ্য রাখার তাওফিক দান করেন।

পাদটীকা

১ — [সুরাহ আর-রহমান -১ থেকে ৪]
২ — [ সুরাহ আল ইসরা, ৫৩]
৩ — [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০১৯]
৪ — [সুরাহ আল-ইসরা, আয়াত ৩৬]
৫ — [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৪৭৭]
৬ — [সুরাহ লুকমান, আয়াত ১৯]
৭ — [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৬৭]
৮ —[সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৬৮]
৯ —[সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০৯৪]

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *