বন্ধু মৃত্যুর পরেও পর্ণগ্রাফি পাঠায়

বন্ধু মৃত্যুর পরেও পর্ণগ্রাফি পাঠায়

একটা ঘটনা মনে পড়ল। আরব বিশ্বের অন্যতম আলিম ড. মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-আরিফি হাফিযাহুল্লাহ। তার একটা বয়ানে শুনেছি। তিনি বলেন, এক যুবক তার কাছে খুব লজ্জিত হয়ে আসলো এবং কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। শাইখকে সে জানালো, শাইখ! আমি খুব বিপদে আছি। আমার বন্ধু মারা গেছে। আমার বন্ধু কবরে চলে গেছে। সে তো কবরে চলে গেছে কিন্তু তার ইমেইল আইডি থেকে আমার ইমেইলে এখনো প্রতিনিয়ত পর্ণ মুভি আসে। বন্ধুতো কবরে চলে গেছে কিন্তু আমার কাছে পর্ণ মুভি পাঠানো বন্ধ হয় নাই। এইজন্য আমি খুব টেনশনে আছি।

শাইখ বললেন, খুলে বল কী ঘটনা?

যুবক বলা শুরু করল, আমরা কয়েকজন বন্ধু ছিলাম। সবাই এক সময় সালাত পড়তাম। ভালো ছিলাম। কিন্তু কিভাবে যে আমাদের সাথে একজন খারাপ বন্ধু জুটে গেলো আমরা বুঝতেই পারলাম না। সে বিভিন্ন সময় আমাদেরকে স্মার্টফোনে বিভিন্ন জিনিস দেখাতো। বন্ধুবান্ধব অকৃত্তিম সম্পর্কের হয়। তখন আমরাও বন্ধুর পাল্লায় পড়ে মাঝে মাঝে এগুলো দেখা শুরু করে দিলাম। একটা সময় সে আর সাধারণ জিনিস দেখায় না। আমাদেরকে একেবারেই খারাপ অশ্লীল মুভিগুলো দেখানো শুরু করল। সরাসরি ব্যভিচার টাইপের জিনিসগুলো দেখানো শুরু করল। প্রথম প্রথম আমরা তাকে বকাঝকা করতাম। কিছু উপদেশও দিতাম। বলতাম, এগুলো ভালো না ভাই, ঠিক হয়ে যাও। কিন্তু মনে মনে আবার চাইতাম যে, একটুখানি আরো দেখি। একদিন দুইদিন এরকম হতে হতে একটা পর্যায় এসে আমরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছি। একটা সময়ে সব বন্ধুবান্ধব মিলে একেবারে গ্রুপিংভাবে এই নোংরা জিনিসগুলো দেখা শুরু করলাম।

একদিন আমাদের ওই বন্ধুকে বললাম, বন্ধু! তুমি দেখি প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস আনো, ঘটনা কী! কোথায় পাও এগুলো!? আমরা ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে তো এগুলো পাই না। বন্ধু আমাদেরকে বলল, আমি একটা ওয়েবসাইটের সাবস্ক্রাইবার। যখনই কোন নতুন ভিডিও আপলোড হয় আমার কাছে নোটিফিকেশন আসে আর আমি সেটা পেয়ে যাই। আমরা আগ্রহ প্রকাশ করলাম এবং বললাম, আমাদেরকেও ওটার সাবস্ক্রাইবার বানিয়ে দাও। সে উত্তর দিল, ডলার খরচ হবে। এরপরেই বন্ধু আমাদেরকে যুক্তি দিলো, ডলার খরচের দরকার নাই। তোমরা নিজেদের মেইল আইডি আমার কাছে দিয়ে দাও। আমি এমন একটা সিস্টেম করে দিবো যে, যখন আমার কাছে নতুন ভিডিওর নোটিফিকেশন আসবে তখন তোমাদের কাছেও অটোমেটিক নোটিফিকেশন চলে যাবে, ফরওয়ার্ড করে দিবো আমি। তোমরা আমার মতো দেখতে পারবা।

আল্লাহর কী হুকুম! এরপরে হল কী! আমাদের ওই বন্ধু হঠাৎ করে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলো। একেবারে বাসের তলায় পিষ্ট হয়ে অন দ্যা স্পট মারা গেলো। বন্ধুতো কবরে চলে গেল কিন্তু সে কী করে গেছে জানি না; হয়ত কোন অটো সিস্টেম করে রেখে গেছে যে, তার আইডি থেকে নটিফিকেশন আসা এখনও বন্ধ হয় নাই। এখনও ওই ওয়েবসাইটে যখনই কোনো ভিডিও আপলোড হয় সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইডিতে নোটিফিকেশন চলে আসে। এভাবে আমাদের বন্ধু এখনও কবর থেকেও আমাদের কাছে পর্ণ মুভির নোটিফিকেশন পাঠাচ্ছে! আমার তো ভয় হয়, এর কারণে আমার কী হয়! তাই আমি তওবা করতে এসেছি।

শাইখ আরিফি হাফিযাহুল্লাহ তাক বললেন, ব্যাপারটাতো কঠিন কিছু নয়। ওয়েবসাইট কতৃপক্ষের কাছে তোমরা মেইল করে বল, আমরা আর এটা চাই না। এটা পাঠানো বন্ধ করে দিন।

তখন যুবক বলল, এই চেষ্টাও আমরা করেছি। কিন্তু কতৃপক্ষ আমাদেরকে জানালো, তোমার আইডি দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে কোন সাবস্ক্রাইবার নেই। কাজেই আমরা এটা অফ করতে পারবো না। যার আইডি তার মেইল থেকে যদি আমাদের অফ করার জন্য বলা হয় তাহলে আমরা অফ করবো। তার আগে নয়। কিন্তু সমস্যা হল, আমাদের ওই বন্ধুর আইডির পাসওয়ার্ড তো আমাদের জানা নাই। পাসওয়ার্ড আমরা উদ্ধার করার চেষ্টাও করেছি, কিন্তু আমরা সফল হইনি। যার কারণে বন্ধুর কাছে যতবার নোটিফিকেশন আসে আমাদের কাছেও ততবার নোটিফিকেশন আসে।

চিন্তা করে দেখুন, এই যে এতগুলো বন্ধু পর্ণমুভিতে এডিক্টেড হল কার কারণে? একটা খারাপ বন্ধুর কারণে। আসলে একটি সুন্দর পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য একজন এডিক্টেডই যথেষ্ট। একজন আসক্ত রোগীই যথেষ্ট।
আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন।আমিন।

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *