হে আমার বোন, তুমি নিজেই তোমার কল্যাণকামী হও!!!

হে আমার বোন, তুমি নিজেই তোমার কল্যাণকামী হও!!!

আল্লাহ তাআলার দেওয়া শরিয়ত পালনের মধ্যেই মানবজাতির- বিশেষ করে নারীজাতির সৌভাগ্যের চাবিকাঠি লুক্কায়িত রয়েছে; আর আনন্দের বিষয় হচ্ছে, ইসলাম প্রচারকগণই মূলত কল্যাণ বাস্তবায়নকারী সেই প্রকৃত, পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী ধারকবাহক…।

বিশেষ করে নারীজাতির কথা বলার কারণ হলো- আজ ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে নারীদেরকে বেশি খেপিয়ে তুলেছে। শত্রুরা নারীদেরকে বুঝাতে চায়- একমাত্র ইসলামই তাদের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অন্তরায়। যুগ যুগ ধরে ইসলাম তাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

একবিংশ শতাব্দিতে এসে শত্রুরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের প্রোপাগান্ডার ফলাফল নিম্নগামী দেখতে পাচ্ছে, বরং যুবক-যুবতীদের মাঝে ব্যাপকভাবে ইসলামী আদর্শের প্রতি আকর্ষণ লক্ষ্য করছে, তখন তারা তাদের মিডিয়া, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, নাটক, সিনেমা, সংস্কৃতি, বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, সাহিত্য, ম্যাগাজিনসহ সকল প্রভাব বিস্তারকারী উপায়-উপকরণগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের প্রপাগণ্ডা বিস্তারের শক্তিশালী মাধ্যম রূপে গ্রহণ করেছে এবং সেগুলো ব্যবহার করে সমাজের- বিশেষ করে নারীদের মাঝে তাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে।

তারা তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র মূলক কর্মকাণ্ডে একেবারেই যে সফলতার মুখ দেখছে না তা নয়। বরং কিছু সরলমনা মা-বোন তাদের মেকি কান্নায় প্রলুব্ধ হচ্ছে। মনে করছে এরাই মনে হয় তার প্রকৃত কল্যাণকামী। এক্ষেত্রে শত্রুরা তাদের বন্ধু ‘শয়তান’-এর কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে। যে পদ্ধতি গ্রহণ করে শয়তান আদম ও হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম)-কে সাময়িক ধোকা দিতে পেরেছিল। আর তা হলো- নিজেকে কল্যাণকামী রূপে পেশ করা।

আজ শত্রুরা নিজেদেরকে নারীদের সামনে কল্যাণকামী রূপে পেশ করছে। তারা বলছে- আমরা সত্যিকারার্থে তোমাদের কল্যাণকামী। আমরা তোমাদের অগ্রযাত্রা দেখতে চাই। পুরুষদের তুলনায় তোমরা কিসে কম? সুতরাং তাদের থেকে পিছিয়ে থাকবে কেন!?আমরা তোমাদেরকে তাদের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড় করাতে চাই। সেই সাথে তারা নারীদেরকে এটাও বোঝায়- তোমাদের অগ্রযাত্রার অন্তরায় হলো ‘ইসলাম’। যুগ যুগ ধরে নারীকে ঘরের কোণে আবদ্ধ করেছে ইসলাম। আবার কখনো কখনো তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে। বলছে- ইসলাম একেবারে ফেলে দেওয়ার বিষয়ও নয়। ইসলাম যে আদর্শ পেশ করেছে তা তেরো-চৌদ্দশে বছর আগে ঠিক ছিল এবং তখনের জন্য তা প্রযোজ্য ছিল। চোদ্দশ বছর পরে এসে একাবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ইসলামকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় এবং গুরুত্ব দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।

শত্রুরা নারীদেরকে কেবল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে তা নয়; বরং যে সকল মুসলিমরা ইসলামের অগ্রযাত্রা চায় এবং ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রূপে দেখতে চায় তাদের বিরুদ্ধেও নারীদেরকে খেপিয়ে তুলেছে। তারা বলছে- মৌলবাদী মুসলিমরাই নারীর উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায়। সুতরাং তাদেরকে পশ্চাদগামী রূপে তুলে ধরতে হবে। তাদের কথা কানে তোলা যাবে না।

হে আমার বোন! আমি বলছি না আমি তোমার কল্যাণকামী আর এটাও বলছি না যে, আমি তোমার অকল্যাণকামী। তবে আমি যেটা বলছি তা হলো- তুমি নিজেই তোমার এবং অপর মুসলিম নারীর কল্যাণকামী হও! সময় এসেছে শত্রু-মিত্র চিনে নেওয়ার। এখন যদি তুমি শত্রু-মিত্র চিনতে ভুল করো তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তোমায় ক্ষমা করবে না আর মহান রবের পাকড়াও তো রয়েছেই!

তোমাকে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার নীতি ভুলে গেলে চলবে না। মহান রব বলেছেন, শয়তান তোমাদের শত্রু; সুতরাং শত্রুকে শত্রু রূপেই গ্রহণ করো। আজ তোমার সেই শত্রু শয়তানকে যারা বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নিয়েছে, তাদেরকে যদি নিজের বন্ধু ভাবো তাহলে তুমি বন্ধুত্ব-শত্রুতার নীতিমালায় ভুল করেছো। শত্রুর বন্ধুরা কখনো বন্ধু হয় না; বরং শত্রুর বন্ধুরা শত্রু-ই হয়ে থাকে।

অনুরূপভাবে মহান রব আরো বলেছেন, আল্লাহ মুমিন (নারী-পুরুষ)-এর বন্ধু। আর যারা আল্লাহকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে, বন্ধুত্ব-শত্রুতার নীতিমালা অনুযায়ী তারাও মুমিনদের বন্ধু হবে। হে আমার বোন! কে তোমার বন্ধু হবে? আর কে তোমার শত্রু হবে? বিবেচনা করে দেখো!

হে আমার বোন! তুমি নিজের ‘কিবলা’ চিনতে ভুল করো না! আজ যারা তোমার সামনে দরদী এবং কল্যাণকামী রূপে আবির্ভূত হচ্ছে, তাদের কিবলা হলো দিল্লি-মস্কো-ওয়াশিংটন-লন্ডন-প্যারিস। আর তোমার কিবলা হলো মহান রবের পবিত্র ঘর ‘বায়তুল্লাহ’। এখন তুমি সেই মহান রবের দিকে ধাবিত হবে নাকি শত্রুদের ‘কিবলা’র পানে ছুটে যাবে? এটা বিবেচনা করা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

হে আমার বোন! এতেও যদি তোমার বিবেচনাবোধ না জাগে, তাহলে তুমি শত্রুদের কিবলায় বসবাসকারী নারীদের জীবন যাত্রার প্রতি তাকাও। তাদের কথায় ধোঁকা না খেয়ে নিজে যাচাই করার চেষ্টা করো। তোমার যাচাই-বাছাই তাদের সমাজে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ এমন এক পরিসংখ্যানে সামনে নিয়ে তোমাকে দাঁড় করাবে, যা দেখে তুমি সত্যিই শিহরিত হবে এবং বুঝতে পারবে শত্রুদের কথাগুলো শুধু ফাঁকা আওয়াজ এবং নারীকে নির্যাতনের প্রতি ঠেলে দেওয়ার এক চিপাগলিপথ বৈ কিছুই নয়! যে পথ তোমাকে জান্নাতের প্রবাহমান নদী-নালার সামনে নয় বরং জাহান্নামীদের শরীর থেকে গলিত রক্ত-পুঁজের সামনে নিয়ে দাঁড় করাবে!

হে আমার বোন! প্রথম কথাটা আবারও তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- আল্লাহ তাআলার দেওয়া শরিয়ত পালনের মধ্যেই মানবজাতির- বিশেষ করে নারীজাতির সৌভাগ্যের চাবিকাঠি লুক্কায়িত রয়েছে; আর ইসলাম প্রচারকগণই মূলত কল্যাণ বাস্তবায়নকারী সেই প্রকৃত, পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী ধারকবাহক…।

বোন আমার! তোমাকে বুঝতে হবে ইসলামের সময়োপযোগীতা; অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতে। এবং সমাজের ধোকাবাজ-প্রতারক নারীবাদীদের সামনের চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করতে হবে যে, আমরা তোদের কিবলায় নই; বরং মহান রবের বাণীতে বিশ্বাসী। সকল মুসলিমের জন্যই সেই মহান রবের বিধান কল্যাণকর ও সময়োপযোগী।

হে আমার বোন! আমি তোমার অকল্যাণকামী নই। তুমি নিজেই তোমার কল্যাণকামী হও। আল্লাহ তোমার সহায় হোন। আমিন।

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *