যালিমদের প্রতি ধিক্কার! তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে?

যালিমদের প্রতি ধিক্কার! তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে?

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ .

আর আল্লাহ যালিমদেরকে ভালোবাসেন না।[১]

আল্লাহ তাআলার এই কথার প্রতি একটু লক্ষ করুন, তিনি বলছেন যে, তিনি যালিমদেরকে ভালোবাসেন না। আর যখন কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না, তখন তার প্রতি রাগান্বিত ও ক্রোধান্বিত হয়ে থাকেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন কারো প্রতি রাগান্বিত ও ক্রোধান্বিত হন, তখন তার সফলতা অপ্রত্যাশিত হয়ে থাকে এবং স্বাভাবিক ভাবে সে সফলতা লাভ করতে পারে না। কারণ এ বিষয়গুলোর প্রত্যেকটাই একটা অপরটার সাথে সম্পৃক্ত। এটা আল্লাহ তাআলার ফয়সালা। আর তিনি তার ফয়সালা জানিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন,

إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ.

জালিমরা সফলতা লাভ করবে না।[2]

পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা যাকে ভালোবাসেন তাকে কল্যাণকর কাজের তৌফিক দিয়ে থাকেন এবং তার প্রতিটা পদক্ষেপে আল্লাহ তাআলা সফলতা দিয়ে থাকেন। যেমনটা আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেছেন,

مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مُسَاءَتَهُ وَلَا بُدَّ لَهُ مِنْهُ.

যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুকে শত্রু ভাবে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমি আমার বান্দার ওপর যা কিছু (আমল) ফরয করেছি; তা দ্বারা আমার সান্নিধ্য লাভ করা আমার নিকট বেশী প্রিয় অন্য কিছু (আমল) দিয়ে সান্নিধ্য লাভের চেয়ে। আর আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিল করে। পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসি এবং আমি যখন তাকে ভালবাসি- আমি হয়ে যাই তার কান, যা দিয়ে সে শুনে। আমি হয়ে যাই তার চোখ, যা দিয়ে সে দেখে। আমি হয়ে যাই তার হাত, যা দিয়ে সে ধরে (কাজ করে)। আমি হয়ে যাই তার পা, যা দিয়ে চলাফেরা করে। সে যদি আমার কাছে চায়, আমি তাকে দান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি তাকে আশ্রয় দেই। আর আমি যা করতে চাই, তা করতে আমি মুমিন বান্দার রূহ কবয করার মতো ইতস্তত করি না। কেননা মুমিন (স্বাভাবিকভাবে) মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি অপছন্দ করি তাকে অসন্তুষ্ট করতে। কিন্তু মৃত্যু তার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।[৩]

হাফিয ইবনু হাজার আল–আসকালানী রহি. বলেন, আল্লাহর বন্ধুুর সংজ্ঞা হলো—

الْعَالِمُ بِاللَّهِ الْمُوَاظِبُ عَلَى طَاعَتِهِ الْمُخْلِصُ فِي عِبَادَتِهِ.

যিনি আল্লাহ সম্পর্কে জানেন তার আনুগত্যে মশগুল থাকেন এবং তারই ইবাদাতে একনিষ্ঠ।[৪]

এমনটাই মতামত দিয়েছেন আল্লামা বদরুদ্দীন আল–আইনি রহি.।

উল্লেখিত হাদিসটি ঘিরে একটি প্রশ্ন রয়েছে।

প্রশ্নটি হলো কিভাবে আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি হতে পারেন?

এর অনেকগুলো উত্তর দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে যার মধ্যে সর্বোত্তম উত্তর হল, তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার করে। ফলে সে এমন কোন কিছু শুনে না যা আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন, এমন কিছু দেখে না যা আল্লাহ তাআলার কাছে অপছন্দনীয়, এমন কিছু ধরে না যা আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন, এমন দিকে পা বাড়ায় না যা আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন।

আর যখন আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিলেন যে, তিনি যালিমদেরকে ভালোবাসেন না, তখন অন্যান্য বান্দাদের হৃদয়ও আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি ঘৃণা ঢেলে দেন। ফলে নিকটবর্তী–দূরবর্তী, পরিচিত–অপরিচিত— সকলেই তাকে ঘৃণা করতে থাকে। আর যাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন, তার চিত্রটা সম্পূর্ণই এর বিপরীত হয়ে থাকে। পরিচিত–অপরিচিত, কাছের– দূরের— সকলেই তখন তাকে ভালোবাসে ও মুহাব্বত করে। এটা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির ব্যাপারে এক অমোঘ নীতি। জেনে তার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন,

وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا.

আর আপনি কখনও আল্লাহর নীতিতে কোন পরিবর্তন পাবেন না।[৫]

আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

إِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبَّهُ قَالَ: فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي السَّمَاءِ فَيَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الْأَرْضِ. وَإِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَيَقُولُ: إِنِّي أُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضْهُ. فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ: إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ فَلَانَا فَأَبْغِضُوهُ. قَالَ: فَيُبْغِضُونَهُ. ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْبَغْضَاءُ فِي الْأَرْضِ .

যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম–কে ডেকে বলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাসো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর জিবরিল আলাইহিস সালাম–ও তাকে ভালোবাসতে থাকেন এবং আকাশে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ তাআলা অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, তোমরাও তাকে ভালোবাসো। তখন আকাশমণ্ডলীর অধিবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। অতঃপর সে বান্দার জন্য জমিনেও স্বীকৃতি স্থাপন করা হয়। আর যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম–কে ডেকে বলেন যে, আমি অমুক বান্দাকে ঘৃণা করি, তুমিও তাকে ঘৃণা করো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর জিবরিল আলাইহিস সালাম–ও তাকে ঘৃণা করেন এবং আকাশে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ তাআলা অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, তোমরাও তাকে ঘৃণা করো এবং আকাশবাসীরাও তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। অতঃপর তার জন্য জমিনেও ঘৃণা স্থাপন করা হয়।[৬]

একথার সমর্থন কুরআন থেকেও পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ سَیَجۡعَلُ لَهُمُ الرَّحۡمٰنُ وُدًّا.

নিশ্চয় যারা ইমান আনে ও সৎকাজ করে দয়াময় অবশ্যই তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন ভালোবাসা।[৭]

পাদটীকা__

[১] সুরাহ আলে ইমরান, আয়াত ১৪০

[২] সুরাহ আল–আনআম, আয়াত ২১

[3] সহিহুল বুখার, হাদিস নং ৬৫০২

[৪] ফাতহুল বারি, ১১/৩৪২

[৫] সুরাহ আল–আহযাব, আয়াত ৬২

[৬] সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৩৭

[৭] সুরাহ মারইয়াম, আয়াত ৯৬

আবদুল্লাহ আল মামুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *